Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Widget

ছোটগল্পের কলাকৌশল | আর্নেস্ট হেমিংওয়ে | অনুবাদ: ফারুক মঈনউদ্দীন

মার্চ ১৯৫৯-এ আর্নেস্ট হেমিংওয়ের প্রকাশক চার্লস স্ক্রিবনার জুনিয়র হেমিংওয়ের গল্পের একটা ছাত্র সংস্করণ করার প্রস্তাব দেন। একটা সংকলনের জন্য যেগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি সেগুলো নিয়ে বারোটি গল্পের একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন তিনি। পরে ভাবলেন, সংকলনটিতে হেমিংওয়ের পছন্দের গল্পও থাকা উচিত, উপরন্তু সংস্করণটির জন্য কলেজ ছাত্রদের উপযোগী লেখকের একটা ভূমিকাও থাকবে। হেমিংওয়ে সায় দিয়েছিলেন যে ছোটগল্পের কলাকৌশলের ওপর বক্তৃতার ঢঙে একটা ভূমিকা লিখে দেবেন তিনি।


মালাগায় বিল ও অ্যানি ডেভিসের১ বাড়িতে বসে ভূমিকা লেখার কাজটি করেছিলেন হেমিংওয়ে। উল্লেখ্য, বহু টেলিগ্রাম ও চিঠি দিয়ে এই দম্পতি নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখককে তাঁদের আতিথ্য গ্রহণে সম্মত করিয়েছিলেন। তাঁর (চতুর্থ) স্ত্রী মেরি স্বামীর এই সম্মতিতে বেশ অবাক হয়েছিলেন, কারণ ডেভিস দম্পতির সাথে তেমন পরিচয় ছিল না তাঁদের। তাছাড়া স্বাধীনভাবে থাকতে অভ্যস্ততার কারণে তাঁরা হেটেলেই থাকতে পছন্দ করতেন। অবশ্য ডেভিস দম্পতি মেজবান হিসেবে তাঁদের সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। শালা-ভগ্নিপতি দুই বুল ফাইটার ডমিংগিন২ ও অর্দোনিসের৩ লড়াই দেখে লাইফ ম্যাগাজিনে লেখার জন্য সেই গ্রীষ্মে এমনিতেই হেমিংওয়ের স্পেন যাওয়া নির্ধারিত ছিল। কাগজটির সাথে চুক্তি অনুযায়ী হেমিংওয়ে এই লড়াই সম্পর্কে তিন কিস্তিতে লিখেছিলেন 'দ্য ডেঞ্জারাস সামার।'


ভূমিকার প্রথম খসড়াটি লেখা হয় মে (১৯৫৯) মাসে। এর মধ্যে অর্দোনিস লড়াইতে মারাত্মকভাবে আহত হন, তবে শেষপর্যন্ত ষাঁড়টাকে হত্যা করতে পেরেছিলেন তিনি। সেই ঘটনার রেশ কাটার পর লেখাটা চূড়ান্ত করেন হেমিংওয়ে। লেখাটা টাইপ করে দিয়েছিলেন মেরি। তিনি পরে তাঁর আত্মজীবনী হাউ ইট ওয়াজ গ্রন্থে লিখেছিলেন যে লেখাটির পুরোটা তিনি অনুমোদন করেন না। স্বামীকে লেখা একটা নোটে তিনি ভূমিকাটা আবার লিখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাঁর বিবেচনায় যেসব অংশ দাম্ভিক, আত্মতুষ্টিমূলক এবং বিদ্বেষপূর্ণ বলে মনে হয়েছে সেগুলোকে বাদ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর কথায় কান না দিয়ে সামান্যই পরিবর্তন করেছিলেন হেমিংওয়ে।


ভূমিকাটা চার্লস স্ক্রিবনারের কাছে পাঠিয়ে হেমিংওয়ে প্রস্তাব দেন বইটি প্রকাশের পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনে সাধারণ পাঠকদের জন্য উপযুক্ত সংস্করণ হিসেবে যাতে প্রকাশ করা হয় ওটা। স্ক্রিবনার সম্মত হন, তবে কৌশলে পরামর্শ দেন যে ভূমিকাটা যেভাবে লেখা হয়েছে সেভাবে না ছেপে প্রতিটি গল্পের প্রাসঙ্গিক অংশ আলাদাভাবে যুক্ত করলে ভালো হবে। স্ক্রিবনারের মনে হয়েছিল, কলেজ ছাত্রদের জন্য বক্তৃতা হিসেবে লেখা ভূমিকাটা সাধারণ পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, তাঁর মতে ওটাকে বিভিন্নজনের প্রতি 'অবজ্ঞা হিসেবে অপব্যাখ্যা'৪ করা হতে পারে। ফলে বই প্রকাশের উদ্যোগটা এখানেই থেমে যায়।


হেমিংওয়ে ভূমিকাটা লিখেছিলেন ক্লাসের ছাত্রদের সামনে ছোটগল্প লেখার কৌশল বিষয়ে উপস্থিত বক্তৃতা হিসেবে। কোনো অনানুষ্ঠানিক আলোচনার লিখিত রূপের মতো ছিল লেখাটা। এটাকে সাহিত্যমানের পরিপন্থী গন্য করা কিংবা হেমিংওয়ের লেখার সক্ষমতা হিসেবে ব্যবহার করা সঙ্গত হতো না। হেমিংওয়ের স্ত্রী এবং প্রকাশক কারোরই ভূমিকাটার ভাষা ও সুর পছন্দ হয়নি। অবশেষে হেমিংওয়ে তাঁদের সাথে একমত হয়েছিলেন।


তিনি গল্পগুলো লেখার পটভূমি ও পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক ও অপরিকল্পিত ভঙ্গিতে, অন্য লেখক, সমালোচক এবং তাঁর নিজের লেখার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন অকপটে এবং ছোটগল্প লেখার কৌশল সম্পর্কে প্রকাশ করেছেন তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ।

কিছু বানান সংশোধন বাদে কোনো সম্পাদনা ছাড়াই লেখাটি 'দ্য আর্ট অভ শর্ট স্টোরি' শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল প্যারিস রিভিউ ম্যাগাজিনের বসন্ত ১৯৮১ সালের ৭৯তম সংখ্যায়।

* * *


গারট্রুড স্টাইন৫ কখনো বেশ বিচক্ষণ ছিলেন, তাঁর সেই প্রাজ্ঞ দিনগুলোতে তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, 'মনে রেখো হেমিংওয়ে, সব মন্তব্য কিন্তু সাহিত্য নয়।' পরের মন্তব্যগুলো সাহিত্য হওয়ার উদ্দেশ্যে কিংবা এরকম কোনো ভান করার জন্য নয়। সেসব ছিল নির্দেশনামূলক, বিরক্তিকর এবং তথ্যসমৃদ্ধ। কোনো লেখক যা লিখেছেন সেসব সম্পর্কে তাঁকে গুরুগম্ভীরভাবে কিছু লিখতে বলা উচিত নয়। বিশ্বস্তভাবে হলে হ্যাঁ, আর ভাবগম্ভীরভাবে হলে, না। ছোটগল্পের কলাকৌশল নিয়ে তৈরি করা যেসব বক্তৃতা বহুবার শুনতে হবে, পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমাদের কি সেগুলোর মতো করে শুরু করা উচিত?

লেখার জন্য অনেকের বাধ্যবাধকতা থাকে। এটার বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই, লেখার কাজটা ওদের জন্য আনন্দের এবং সম্ভবতঃ উপশমকারী। যদি সম্পাদকেরা লেখকদের লেখার খুব দুর্বল অংশগুলো বাদ দেন, বানান এবং বাক্যগঠন দেখিয়ে দেন এবং তাঁদের ভাবনা ও বিশ্বাসকে মূর্ত করতে সাহায্য করেন, কিছু বাধ্যতামূলক লেখক একটা অস্থায়ী খ্যাতি অর্জন করতে পারেন। কিন্তু যখন মল বা বিষ্ঠা-যে শব্দটিকে শিক্ষক ব্যাখ্যা করবেন-কোনো বইয়ের কাঠামো হয়, তার দুর্গন্ধ যথেষ্ট ঘ্রাণজ সংবেদনশীল যে কারো কাছেই বোধগম্য থেকে যায়।

বাধ্যতামূলক লেখককে পরামর্শ দেওয়া উচিত যাতে তিনি ছোটগল্প লেখার চেষ্টা না করেন। যদি চেষ্টা করেন, তাঁকে কোনো অমোঘ স্থপতির ভাগ্য বরণ করতে হবে, যার সমাপ্তি হবে নিঃসঙ্গ অনিচ্ছুক কোনো বাঁশিওয়ালার মতো। মহোদয়গন, আমরা বরং এইসব দুর্ভাগা প্রাণীদের বিষণ্ণ ও নিঃসঙ্গ সমাপ্তি নিয়ে সময় নষ্ট না করে আসুন আমাদের অনুশীলন শুরু করি।

কোনো প্রশ্ন আছে? আপনারা কি ছোটগল্প লেখার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন? আমি কি কোনো সাহায্যে এসেছি? কিংবা আমি কি নিজের কথা বোঝাতে পারিনি? আমার এরকমই মনে হচ্ছে।

ভদ্রমহোদয়গন, আমি আপনাদের কাছে অকপট থাকব। ছোটগল্পের পÐিতেরা কোনো ভালো সমাপ্তিতে পৌঁছাতে পারেন না। আপনি এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? আমাকে মম-এর [সমারসেট] কথা উল্লেখ করছেন? দীর্ঘায়ু কোনো সমাপ্তি হতে পারে না, মহোদয়গন। এটা একটা সম্প্রসারণ। এটা নিয়ে ছি ছি করতে পারি না, কারণ আজ পর্যন্ত কখনোই কোনোকিছু নিয়ে ছি ছি করিনি আমি। ফেলে দাও এটা, জ্যাক। এটা নিয়ে নিন্দামন্দ কোরো না।

আমাদের কি অলংকার বাদ দেওয়া এবং একই সাথে উপলব্ধি করা উচিত যে সবচেয়ে খাঁটি অপ্রচলিত ফ্যাশনদুরস্ত লোকটি বর্তমান সম্পর্কে যা বলছে সে আগামির তেইশ স্কিডু?৬ আমাদের কি উচিত তেমনটি করা? কেমন বুদ্ধিমান তরুণ আপনি, আপনার সাথে থাকার কি সুবিধা? আমি কি খাঁটি 'বলরুমের কলা'র৭ জন্য কোনো অনুরোধ পাচ্ছি? মহোদয়গন, আপনাদের জন্য সেসব আমাদের গাদা গাদা আছে।


বস্তুতঃ কীভাবে একটা বাক্য শুরু করতে হয়, সেটা না জেনে লেখকেরা এভাবেই করেন বলে সেখানে ছোটগল্প লেখা নিয়ে বেশি কিছু বলার থাকে না, যদি আপনি পেশাদার বিশ্লেষক না হন। যদি এটা করতে পারেন, তাহলে আপনাকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। আর যদি না পারেন, তাহলে কোনো ব্যাখ্যাই কখনো কাজে আসবে না।

আমি দেখেছি কিছু জিনিস সত্য। আপনি জানেন এমন কোনো বিষয় বা ঘটনা যদি ছেড়ে যান, তাহলে গল্পটা মজবুত হয়। যদি কিছু জিনিস আপনি জানেন না বলে ছেড়ে যান বা এড়িয়ে যান, তাহলে গল্পটা হবে অখাদ্য। একটা গল্পের পরীক্ষা হয়, সম্পাদক নয়, আপনি কী পরিমাণ ভালো জিনিস বাদ দিয়েছেন সেটা দিয়ে। এই বইতে 'বিগ টু-হার্টেড রিভার' নামে একটা গল্প আছে, যেখানে একটা বালক যুদ্ধ থেকে চরম ক্লান্ত (beat to the wide) অবস্থায় বাড়ি ফিরছে। বীট টু দ্য ওয়াইড সম্ভবত আরো তীব্র ধরনের ক্লান্তি, যারা ওটা সয়েছে তারা সেই অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অক্ষম এবং তাদের সামনে বিষয়টার উল্লেখ তারা সহ্য করতে পারত না। তাই যুদ্ধ এবং সেসম্পর্কিত সব বিষয়, যুদ্ধের যেকোনো কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। নদীটা ছিল ফক্স নদী, মিশিগানের সেনির পাশে, বড় দুই হৃদয়ের (বিগ টু-হার্টেড) নয়। নামের পরিবর্তনটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, অজ্ঞতা বা অসাবধানে নয়, কারণ বড় দুই হৃদয়ের নদী হচ্ছে কবিতা। এই গল্পে অনেক ইন্ডিয়ান আছে, যুদ্ধ আছে, কিন্তু ইন্ডিয়ানরা বা যুদ্ধ কোনোটাই সেখানে আসেনি। দেখতেই পাচ্ছেন, বিষয়টা খুব সোজা এবং সহজে বিশ্লেষণযোগ্য।


'অ্যা সি চেঞ্জ' নামের একটা গল্পে সবকিছুই ছেড়ে যাওয়া হয়েছে। সেই যুগলকে সেন্ট জিন দে ল্যুজের বাস্ক বারে দেখেছি আমি, গল্পটাও খুব ভালোভাবে জানতাম, এতই ঘনিষ্ঠভাবে যেন ভালোর বর্গমূল, এবং আমার নিজের গল্পটা ছাড়া যেটা পছন্দ সেটাই ব্যবহার করতে পারতাম ওর বেলায়। তাই মূল গল্পটা আমি ছেড়ে দিই। কিন্তু সেখানে সবই ছিল। সেসব দেখা না গেলেও ছিল ওটার মধ্যে।

নিজের কাজ সম্পর্কে কথা বলা বেশ কঠিন, কারণ এতে দাম্ভিকতা আর অহংকারের ইঙ্গিত দেয়। আমি দাম্ভিকতা থেকে মুক্ত হয়ে বিনয় আনার চেষ্টা করেছি। মাঝে মাঝে এসব করি ঠিকই, কিন্তু অহংকার ছাড়া বেঁচে থাকতে চাই না আমি, যেসব নিয়ে আমার গর্ব নেই সেসব লিখতে বা প্রকাশ করতেও চাই না। এটাকে আপনি যেভাবে ইচ্ছে নিতে পারেন। জ্যাক। আমি নিজে ব্যাপারটাকে সেভাবে না-ও নিতে পারি। কারণ, হতে পারে আমরা আলাদাভাবে তৈরি।

আরেকটা গল্প 'ফিফটি গ্র্যান্ড।' প্রথমে গল্পটা এভাবে শুরু হয়েছিল, 'সৈন্যটা জিজ্ঞেস করল, "বিনিকে এত সহজে কীভাবে সামলালে জ্যাক?" জ্যাক বলে, "বিনি এক ভয়ানক স্মার্ট বক্সার।" যখনই খেলতে এসেছে, কিছু একটা ভাবছে সে। তাই যতবার সে চিন্তা করছিল, আমি আঘাত করছিলাম ওকে।'


'ফিফটি গ্র্যান্ড' লেখার আগে প্যারিসে বসে ফিটজেরাল্ডকে গল্পটা বলে আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, জ্যাক ব্রিটনের মতো একজন বক্সার কতখানি বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে পারে। সেই ঘটনা দিয়েই গল্পটা শুরু করেছিলাম, যখন শেষ হয় বেশ খুশি লাগছিল, স্কটকে সেটা দেখাই আমি। সে বলে যে গল্পটা খুব পছন্দ হয়েছে ওর, এবং ওটা নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে এমন সব কথা বলছিল যে আমি বিব্রত বোধ করি। তখন সে বলে, 'এখানে কেবল একটামাত্র জিনিস ভুল আছে আর্নেস্ট, আর এটা বলছি তোমার বন্ধু হিসেবে। তোমাকে ব্রিটন ও লিওনার্ডের ব্যাপারে ওল্ড চেস্টনাটটা৮ বাদ দিতে হবে।'


সেসময় আমার নম্রতা এতই ঊর্ধমুখী ছিল যে ভাবলাম সে নিশ্চয়ই মন্তব্যটা আগে শুনেছে কিংবা ব্রিটন এটা আগে কাউকে বলেছে। তখন ফিটজেরাল্ডের ভাবনা যেভাবে কাজ করছিল তাতে সে 'ওল্ড চেস্টনাট'কে একটা ঐতিহাসিক বক্তব্য বলে উল্লেখ করে, কারণ, এটা একবারমাত্র শুনেছিল সে এক বন্ধুর কাছ থেকে, আর সেজন্য গল্পটা থেকে বক্সিংয়ের দর্শন সম্পর্কে আমার চমৎকার সেই উদঘাটনটা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম আমি। গল্পটা ছাপা হওয়ার পরে বুঝতে পারি, সেই আকর্ষণীয় গুণ ও বিনয় কতখানি মারাত্মক হতে পারে। সুতরাং, অতিরিক্ত বিনয়ী হবেন না মহোদয়গন। বিনয়ী হবেন পরে, কিন্তু কাজের সময় নয়। তারা সবাই আপনার সাথে শত্রুতা করবে। তবে এটা সবসময় ইচ্ছাকৃত নয়। কখনো এটা তাদের স্রেফ অজ্ঞতা। লেখকদের সবচেয়ে করুণ এই অবস্থার মুখোমুখী হবেন আপনারা প্রায়ই। যদি কোনো প্রশ্ন না থাকে, তাহলে আমরা সামনে এগিয়ে যাই।


আমার বিশ্বস্ত ও অনুগত বন্ধু ফিটজেরাল্ড সেসময় নিজের কাজের চেয়ে আমার কাজের প্রতি সত্যিকার অর্থেই বেশি আগ্রহী ছিল। সে আমাকে গল্পটা নিয়ে স্ক্রিবনার্স-এর কাছে পাঠায়। গল্পটা আগে কসমোপলিটন ম্যাগাজিনের রে লংয়ের৯ কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, কারণ, ওটাতে কোনো প্রেমের বিষয় ছিল না। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই, যেহেতু আমিই ইচ্ছাকৃতভাবে ওটা থেকে সব প্রেমের বিষয় বাদ দিয়েছিলাম, আর তাই সেখানে কেবল দুই মহিলা ছাড়া আর কোনো নারী চরিত্র ছিল না। শেকসপিয়ারের লেখার মতো দুই মহিলা ঢোকে, তার পর গল্পটা ছেড়ে বের হয়ে যায়। এটা কোনো প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে যা শুনবেন তার মতো নয়, যেমন, যদি কোনো নারীচরিত্র গল্পের প্রথম প্যারায় থাকে, তার প্রথম উপস্থিতি জায়েজ করার জন্য শেষের দিকে সে আবার ফিরে আসবে। এটা ঠিক নয় মহোদয়গন। আপনারা তাকে ছাড়াই চলতে পারবেন, জীবনে ঠিক যেমন হয়। এমনও ঠিক নয় যে গল্পের শুরুতে যদি দেয়ালে একটা বন্দুক ঝুলতে দেখা যায়, ওটা দিয়ে চৌদ্দ পৃষ্ঠায় একটা গুলি ছুড়তে হবে। সম্ভাবনাটা এমন হবে মহোদয়গন যে ওটা যদি দেয়ালে ঝোলানোও থাকে, গুলি হবে না। যদি কোনো প্রশ্ন না থাকে, আমরা কি এগিয়ে যাব? হ্যাঁ, গুলি করা ছাড়াই বন্দুকটা একটা প্রতীক হতে পারে। সেটাই সত্য। তবে যথেষ্ট ভালো লেখক হলে ওটাকে দেখানোর জন্য দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখেই একটা ঝাঁকুনি দেওয়া সম্ভব। মহোদয়গন, আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন না। হতে পারে সে বন্দুকের ব্যাপারে খেয়ালি কিংবা হতে পারে গৃহসজ্জার জন্য ওটা রাখা হয়েছে ওখানে, কিংবা দুটোই।

এভাবে সম্পাদকের ওপর ম্যাক্স পারকিনসের চাপের কারণে স্ক্রিবনার্স ম্যাগাজিন গল্পটা ছাপতে এবং আমাকে আড়াইশ ডলার দিতে রাজি হয় এই শর্তে যে ওটা ছোট করে দিতে হবে, যাতে বইয়ের শেষ পাতা ছাড়িয়ে না যায়। ওরা ম্যাগাজিনকে বই বলে। এটার একটা তাৎপর্য আছে, তবে আমরা তার ভেতর যাবো না। শক্ত প্রচ্ছদ দিয়ে ছাপলেও ওটা বই ছিল না। এটা আপনাদের লক্ষ্য করতে হবে, মহোদয়গন। যা-ই হোক, ম্যাগাজিনটার সম্পাদকের নির্বুদ্ধিতা এবং তাঁর একগুঁয়েমি দেখে কোনো রাগ বা আশা ছাড়াই ব্যাপারটা আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করলাম। গল্পটা আমি নিজেই আগে কাটছাঁট করেছিলাম, একমাত্র উপায় ছিল আরো পাঁচশ শব্দ ছেঁটে ফেলা, তাই প্রথম পাঁচশ শব্দ কেটে ফেললে চলে। নিজে থেকে প্রায়ই এরকম করি আমি, এতে গল্পগুলো আরো ভালো হয়। এভাবে গল্পটার কোনো উন্নতি হতো না, কিন্তু আমি ভাবি এটা ওদের ব্যাপার১০, আমার নয়। বইতে সেসব নিয়েই গল্পটা থাকবে। সেখানে পড়তে গিয়ে ওটাকে অন্যরকম মনে হবে আপনাদের। এবিষয়ে আরো জানতে পারবেন পরে।

না, মহোদয়গন, ওরা প্রথম পাঁচশ শব্দ কাটেনি। সেটা না করে লেখাটা ওরা একজন খুব তরুণ বুদ্ধিমান সহ-সম্পাদককে দেয়, তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন যে ওখান থেকে কাটতে তাঁর কোনো সমস্যাই হবে না। প্রথম প্রয়াসে সেটাই তিনি করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক শব্দ কেটে দেন তিনি, ফলে গল্পটার কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যখন লিখি তখনই ওটা থেকে অনেক কিছু কেটেছিলাম, পরবর্তী সময়ে স্কটের অনুরোধে এমনকি অধিবিদ্যার বিষয়টিও বাদ দিয়েছিলাম, যা সাধারণত ছেড়ে দিই আমি। ফলে তারা শেষপর্যন্ত মাঝপথে ছেড়ে দেয়। আমি বুঝতে পারি মাসিক আটলান্টিক কাগজে ওটা ছাপতে এডওয়ার্ড উইকস১১ পেয়েছিলেন এলেরি সেজউইককে১২। তখন সবাই চাইছিলেন আমি যাতে আরো মুষ্টিযুদ্ধের গল্প লিখি। কিন্ত লিখিনি, কারণ, আমি চেষ্টা করছিলাম যা খোঁজ করছি সেটা যদি পাই সেরকম যেকোনো একটা বিষয়ের ওপর একটিমাত্র গল্প লিখতে। কারণ, ভালো লাগলে জীবন খুব ছোট, আর এটা তখনই জানতাম আমি। লেখার মতো আরো বিষয় আছে, খুব ভালো মুষ্টিযুদ্ধের গল্প লেখার মতো অন্যরাও আছেন। যেমন ডব্লিউ সি হেইনজ-এর১৩ দ্য প্রফেশনাল পড়তে পারেন আপনারা।

কাটছাঁট করা আত্মবিশ্বাসী সেই তরুণ সম্পাদক রিডার্স ডাইজেস্ট ম্যাগাজিনের কেউকেটা হয়েছিলেন পরে। নাকি হননি? আমাকে নিশ্চিত হতে হবে। তাহলে দেখুন মহোদয়গন, আপনি কখনোই জানেন না, বস্টনে যা আপনি পান শিকাগোতে সেটা হারিয়ে ফেলেন। এটাই প্রতীকবাদ, আপনারা তার ওপর লালা পরীক্ষা১৪ চালাতে পারেন। এভাবেই আমরা এখন আমাদের মধ্যে প্রতীকবাদ শনাক্ত করি এবং এযাবত এটাতে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। তবে মনে রাখবেন, এটা সম্পূর্ণ নয়। আমরা একটা পথ বের করার জন্য ভেতরে যাচ্ছি। ঘটনাক্রমে, কিছুদিনের মধ্যে স্ক্রিবনার্স ম্যাগাজিন পেছনের পাতার মধ্যে রাখার চেষ্টা করা দীর্ঘ ছোটগল্পের একটা প্রতিযোগিতা শুরু করে এবং বিজয়ীদের প্রতিবার আড়াইশ ডলার পুরস্কার দিয়ে যাচ্ছিল।

আপনাদের উপলব্ধিজাত প্রশ্নগুলোর জবাব যেহেতু দিয়েছি চলুন আরেকটা গল্প নিয়ে আলোচনা করি।

এই গল্পটার নাম 'দ্য লাইট অভ দ্য ওয়ার্ল্ড'। ওটার নাম দিতে পারতাম 'দেখ দরজায় দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছি আমি' কিংবা অন্য কোনো ঘোলা কাচের নাম, সেটা নিয়ে ভাবিনি আমি, তবে 'দ্য লাইট অভ দ্য ওয়ার্ল্ড' ভালো। এটার বিষয়বস্তু বহুবিধ এবং এটাকে একটা সরল কাহিনী ভাবলে ভুল হবে। আপনারা যা-ই শোনেননা কেন, আসলে ওটা অ্যালিস নামের এক বারবনিতাকে লেখা একটা প্রেমপত্র। যে গল্পটা লেখার সময় তার শরীরের ওজন দুইশ দশ পাউন্ড কিংবা আরো বেশি। এখানে মূল কথাটা হচ্ছে কেউ জানে না এখন আমরা যেরকম সে তুলনায় তখন কেমন ছিলাম। এটা আপনার ব্যাপারে বলছি জ্যাক। সারাক্ষণ মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে যতদিন আপনি আয়নায় নিজেকে না দেখেন, ততদিন পর্যন্ত এটা বেশি খারাপ মনে হবে মেয়েদের বেলায়। গল্প লিখতে গিয়ে এবিষয়ে আমি কিছু করতে চাইছিলাম। কিন্তু অল্প কিছু মৌলিক জিনিস আছে, যেগুলো নিয়ে কিছু করা যায় না। তাই আমি যেটা করি, সেটাকে ফরাসিরা বলে কনস্তাতি, মানে লক্ষ্য করা। আপনাকে সেটা করাই শিখতে হবে, আর আপনি যদি ছোটগল্প বুঝতে চান, তাহলে আপনার ফরাসি ভাষা শেখা উচিত, তবে বরাবর এটাতে লেগে থাকার চেয়ে বন্ধুর পথ আর কিছু নেই। মেয়েদের ব্যাপারে এটা সবচেয়ে কঠিন, এবং ওরা যদি বলে আপনি যেরকম লিখেছেন সেরকম কোনো মেয়েমানুষ নেই, দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। এটার একমাত্র অর্থ আপনার মেয়েমানুষেরা ওদেরগুলোর মতো নয়। আপনি কখনো ওদের মেয়েমানুষদের দেখেছেন জ্যাক? আমি কয়েকবার দেখেছি, আপনি ভয় পাবেন, যদিও জানি আপনি সহজে ভয় পান না।

মেয়েদের ব্যাপারে আমি গঠনমূলক যা শিখেছি, সেটা কেবলমাত্র নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী এরকম কিছু নয় যে ওরা যখন আপনাকে গালি দেয়, ওদের দোষারোপ করবেন না, কারণ কেউ ওদেরও গালি দিয়েছে। অনেক সময় ওরা জানেও না ওদের মধ্যে এটা আছে। ওরা এটা কীভাবে পেয়েছে সেটা কোনো ব্যাপার নয়, ওদের জীবনের সবচেয়ে সুদিনে যেমন ছিল সেভাবেই ওদের সম্পর্কে ভাবতে হয়। এব্যাপারে এটাই আপনারা করতে পারেন এবং গল্পটিতে আমি সেটা করার চেষ্টা করছি।


এবারে আরেকটি গল্পের কথা বলি, 'দ্য শর্ট হ্যাপি লাইফ অভ ফ্রান্সিস মাকোম্বার।' জ্যাক, কেবল নামটা লেখার জন্য এখনও পর্যন্ত আমি হুড়ো খাই। একারণেই আপনি লিখেন, ওরা কি বললো কিছুই আসে যায় না। আমি খুশি যে আমি চিনি এমন কারো সাথে আছি আমি, ফালতু ছাত্রগুলো বিদায় হয়েছে। ওরা যায়নি? ঠিক আছে। ওদের সাথে পেয়ে আমি আনন্দিত। আপনাদের নিয়েই আমাদের প্রত্যাশা। এসব পদার্থ সেনাদলকে খাওয়ানোর জন্য। ছাত্ররা, সহজ হোন।

এক অর্থে এটা সহজ একটা গল্প, কারণ মহিলাটিকে বাস্তব জীবনে খুব ভালো করে চিনি আমি, তারপর এই গল্পটির জন্য তাকে উদ্ভাবন করে চরিত্রটা তৈরি করি। আপাদমস্তক একটা কুত্তী ওটা, কখনো বদলায় না। আপনারা সম্ভবত এধরনের মেয়েমানুষের দেখা কখনোই পাবেন না, কারণ, আপনাদের অনেক টাকা নেই। আমারও নেই, তবে পটিয়ে ফেলি। তখন দেখি, সে বদলায়নি। ভালোই ছিল সে, কিন্তু সত্যিকার ভালো ও কখনোই হবে না আর। প্রথম যখন তাকে চিনি তখন সে ছিল চমৎকার একজন, পরে যখন ওকে আবিষ্কার করি, তখন সে আমার দেখা জঘন্যতম কুত্তী থেকে পুরো খপ্পরওয়ালি একজন। ওটা আমার ব্যাপার নয়, আমার কাজ নয়, আমার পথেরও নয়, তবে নিজের গুণেই চমৎকার ছিল সে, এবং সব কিছুর ওপর আমি ছিলাম তার, এটা থেকে যে কোনো কিছু ভাবতে পারেন আপনারা। বিষয়টা এতই ঘনিষ্ট যে আমি ওটা নিয়ে সাফ লিখতে পারি। আপনারা যেটাকে গল্পের পটভূমি বলেন, এটা হচ্ছে তা-ই। আপনারা এসব ফেলে দিয়ে যেটা জানতে পারবেন সেখান থেকে উদ্ভাবন করে নেবেন। এসব আরো আগে বলা উচিত ছিল আমার। লেখালেখির ব্যাপারে এগুলোই সব। অর্থাৎ থাকতে হবে একটা নিখুঁত কান-এটাকে বাছাই করা নির্ভেজাল স্বর বলতে পারেন-থাকবে কাজের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ, যেমন একজন পাদ্রির থাকে তাঁর ঈশ্বরের প্রতি, থাকতে হবে একজন চোরের মতো সাহস, থাকবে না লেখার প্রতি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর প্রতি নীতিবোধ, তাহলেই হবে মহোদয়গন। খুব সহজ এটা। যে কেউ লিখতে পারে, যদি কাজটার জন্য আলাদাভাবে তৈরি হয় সে এবং নিজেকে ন্যস্ত করে। এটা নিয়ে কখনোই অনেক বেশি চিন্তা করবেন না। কেবল যেসব প্রয়োজনীয় উপাদানের কথা বললাম, সেসব আয়ত্ত¡ করবেন। অর্থাৎ বোঝাতে চাইছি, এখন যেসব উপায় মোকাবেলা করার জন্য যা নিয়ে আপনাকে লিখতে হবে, সেটা হচ্ছে বর্তমান। একটা সময় ছিল যখন এসব আরো সুন্দর ছিল, অনেক বেশি সুন্দর এবং সেসব সুলিখিত লেখা রচিত হয়েছিল চমৎকার মানুষদের দ্বারা। এখন মৃত সবাই, মৃত তাঁদের সময়ও, তবে তাঁরা সেসব মোকাবেলা করেছিলেন ভালোভাবেই। সেসব দিন পেরিয়ে গেছে, সেভাবে লিখা এখন আপনার কাজে আসবে না আর।


গল্পটাতে ফিরে আসি। মারগট মাকোম্বার নামের মেয়েমানুষটি এখন ঝামেলা পাকানো ছাড়া আর কারো কোনো কাজে লাগে না। আপনি তার সাথে সেক্স করতে পারেন, কিন্তু সেটাই সব। লোকটা ভালো ও নির্বোধ। বাস্তব জীবনে তাকে ভালোভাবে চিনতাম, তার সম্পর্কে যা জানতাম তা থেকে তাকে আবিষ্কারও করেছিলাম আমি। তাই সে যেমন, তেমনই ছিল, কেবল তাকে উদ্ভাবন করা হয়েছে। শ্বেতাঙ্গ শিকারিটা ছিল আমার খুব ভালো বন্ধু, আমি কি লিখি তাতে ওর কিছুই আসে যায় না, যদি লেখাটা পাঠযোগ্য হয়, সেজন্য ওকে আদপেই উদ্ভাবন করতে হয়নি আমার। কেবল পারিবারিক ও ব্যবসায়িক কারণে এবং বন্যপ্রাণী বিভাগের ঝামেলার বাইরে রাখার জন্য ওকে ছদ্মবেশ দিতে হয়। ওরা যেহেতু চক্রটা আবিষ্কার করতে পারবে এবং সে ছিল সেই অঙ্গনের দূরতম জিনিস, তাই আমাকে যথেষ্ট ছদ্মবেশ দিয়ে ওর যত্ন নিতে হয়েছে। ও এমন গর্বিত ছিল যেন আমরা দুজনে মিলে লিখেছি গল্পটা, যা প্রকৃতপক্ষে যেকোনো ব্যাপারে আপনি সবসময়ই করে থাকেন, যদি অনেক পেছনে ফিরে যান। তাই এটা আমাদের দুজনের মধ্যকার গোপন ব্যাপার। গল্পটার ব্যাপারে এটাই সব, কেবল সম্ভবত সিংহটা যখন গুলি খায় সেটা ছাড়া, আমি সত্যিই ওটার ভেতরের কথা চিন্তা করেছি, ভান করিনি। সত্যিই একটা সিংহের ভেতরটা কল্পনা করতে পারি আমি। ব্যাপারটা বিশ্বাস করা কঠিন, আপনারা বিশ্বাস না করলেও আমার তরফে কোনো সমস্যা নেই। অনেক মানুষ এটা ব্যবহার করেছে, যদিও একটিমাত্র ভুল করেও একজন এটা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছে। কোনো কোনো ভুল আপনাকে শেষ করে দেয়। এই ভুলটাই ওকে খুন করে এবং সে যা লিখেছে, খুব দ্রুত দেখা যায় তার সব ভুল। আপনার নিজেকে এসব দেখতে হবে প্রতি মুহূর্তে। যত বেশি প্রতিভাবান আপনি, ততবেশি এইসব ভুলের দিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে জ্যাক, কারণ আপনি থাকবেন দ্রুততর সঙ্গীদের সাথে। একজন লেখক যিনি যতদূর সম্ভব ওপরে উঠছেন না, তিনি যা চান সেসব ধরনের ভুল করতে পারেন। এগুলোর কিছুই গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনিও গুরুত্বপূর্ণ নন। যেসব লোক তাঁকে পছন্দ করে, তারাও কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তাঁদের অকালমৃত্যু ঘটতে পারে। এতে কোনো পার্থক্য ঘটবে না। এটা খুব খারাপ। কারো বইয়ের একটা পৃষ্ঠা পড়ার সাথে সাথে আপনি বলতে পারবেন ওটা গুরুত্বপূর্ণ কি না। এটা দুঃখজনক, এরকম করতে চান না আপনি। একথা যাঁরা বলবেন, তাদের একজন হতে চাই না আমি। সুতরাং কোনো ভুল করবেন না। তাহলে দেখুন, কত সহজ ব্যাপারটা? কেবল সোজা সেখানে ঢুকে পড়ুন এবং একজন লেখক হয়ে উঠুন।

এটা হচ্ছে গল্পটাকে মোকাবেলা করা সম্পর্কে। কোনো প্রশ্ন? না, আমি জানি না আপনি যা জানেন তার বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ও [মারগট মাকেম্বার] সিংহটাকে গুলি করেছিল কি না। নিজেকে প্রশ্ন করলে এটা বের করতে পারতাম, কারণ, বিষয়টা আবিষ্কার করেছিলাম আমি এবং আরও করতে পারতাম। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে কোথায় থামতে হবে। এটাই একটা ছোটগল্পকে তৈরি করে, অন্ততপক্ষে সংক্ষিপ্ত করে। কেবল একটিমাত্র ইঙ্গিত আপনাদের দিতে পারি, এটা আমার বিশ্বাস যে কুকুরি স্বভাবের স্ত্রীদের দ্বারা দুর্ঘটনাবশত স্বামীকে গুলি করা কিংবা চেষ্টা করার ঘটনা সত্যিই কম। আমরা কি এগিয়ে যাবো?



একটা গল্পের ধারণা কিভাবে পাওয়া যায়, যদি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা পাবেন 'দ্য স্নোজ অভ কিলিমাঞ্জারো' গল্পে। তারা আপনাকে নিয়তি-নির্ধারিত করে ফেলে এবং সবসময় এমন করার চেষ্টা করে, যেন আপনি এমন একজন, যে কেবল তাদের জন্যই লিখতে পারে। এই বক্তৃতায় আমি মৌখিক ভাষ্য ব্যবহার করছি, যা বিভিন্নরকম হতে পারে। এটা লেখার অনেক পন্থার একটি, সুতরাং এটাও অনুসরণ করতে পারেন, হয়তো আপনারা কিছু জানতে পারবেন। লিখতে পারে এমন যে কেউ মৌখিক ভাষায়, পাণ্ডিত্যপূর্ণ, অনিবার্যভাবে নিষ্প্রভ অথবা নিখাদ ইংরেজি গদ্য লিখতে পারেন, ঠিক যেমন স্লট মেশিনগুলোকে সরল হারে, শতাংশের হারে, বিলিয়ে দেওয়া কিংবা চুরি করার কাজে লাগানো যায়। যারা কথ্যভাষায় লিখতে পারেন, তাঁরা শুরুর অংশটা ছাড়া কখনোই লেখার ব্যাপারে বুভুক্ষ থাকে না। অন্যগুলো আপনি অনিয়মিতভাবে চালাতে পারেন। কিন্তু যেকোনো ভালো লেখক এগুলোর সবই করতে পারেন। আমার এটা মৌখিক, আশা করি চৌদ্দ বছরের ওপরের সবার জন্য অনুমোদিত। ধন্যবাদ।


যা-ই হোক, আমরা আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরলাম। ওটা এমন এক দেশ, যেখানে টাকা ফুরিয়ে না যাওয়া অব্দি কিংবা কোনো বিপত্তিতে না পড়লে কেউ থাকতে পারে এক বছর। কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় জাহাজের সংবাদপত্র রিপোর্টারদের কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে ওখানে আমার কী প্রজেক্ট, তখন বলেছিলাম যে সেখানে লেখার কাজে যাচ্ছি আমি এবং আফ্রিকা ফিরে যাওয়ার জন্য কখন আমার আরো কিছু টাকা হয়েছিল। বিভিন্ন যুদ্ধ সেই প্রজেক্ট ধংস করে দিয়েছে, তাই সেখানে ফিরে যেতে উনিশ বছর সময় লাগল। যা-ই হোক, এই কথা কাগজে এসেছিল এবং সত্যিকার চমৎকার, সুন্দরী এবং ধনী এক মহিলা আমাকে চায়ের দাওয়াত দেন, আমরা কিছু পানও করেছিলাম। তিনি বলেন, কাগজে প্রজেক্টটার কথা পড়েছেন তিনি, টাকার অভাবে কেন আমাকে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে? তাঁকে এবং আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি যেকোনো সময় আফ্রিকা যেতে পারি, আর টাকা হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা ভালো মানুষদের মনোরঞ্জনের জন্য বুদ্ধিমানের মতো খরচ করতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রস্তাবটা ছিল অতি উত্তম, আন্তরিক ও চমৎকার, তাঁকে খুব ভালো লাগে আমার, তবে প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করি।


তাই আমি কি ওয়েস্টে নেমে পড়ি এবং ভাবতে শুরু করি যদি প্রস্তাবটা গ্রহণ করতাম তাহলে আমার মতো একটা চরিত্রের বেলায় কি ঘটতে পারত, যার খুঁতগুলো আমি জানি। তখন উদ্ভাবন করা শুরু করলাম এবং নিজেকে নিয়ে একটা চরিত্র তৈরি করলাম। মৃত্যুর অংশটা জানি, কারণ সেসব পেরিয়ে এসেছি আমি, একবার নয়, বহুবার। শুরুতে, মাঝপথে এবং শেষভাগে ঢুকেছি তার মধ্যে। সুতরাং আমাকে এমন একজনকে বের করতে হয় যাকে আমি চিনি এবং যে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না-যাকে পাওয়া গেল, সে হচ্ছি আমি এবং তাকে আপনি একটা ছোটগল্প জাতীয় লেখায় ব্যবহার করতে পারেন, কিংবা ধরুন আপনি যদি বেহিসেবী না হয়ে সতর্ক থাকেন তাহলে হবে চারটি উপন্যাসে। আমার যা সঞ্চিত ছিল তার সব গল্পটাতে ঢেলে দিই, সবটুকুই খরচ করে ফেলি। যদি আপনারা জানেন আমি কি বোঝাতে চাই, সত্যিই অনেক কিছু ফেলে দিই আমি। আমি এটা নিয়ে জুয়া খেলছি না, কিংবা খেলছি। কে জানে? সত্যিকার জুয়াড়িরা জুয়া খেলে না। অন্ততপক্ষে আপনারা ভাবেন তারা বাজি ধরে না। তারা খেলে, জ্যাক, চিন্তা করবেন না। অতএব যত ভালোভাবে পারি আমি নারী ও পুরুষ তৈরি করি এবং খুব ভারি-এমন ভারি যা কোনো গল্প আগে কখনো বহন করেনি, এমন সব সত্য জিনিস ঢুকিয়ে দিই, তার পরও ওটা ওপরে উঠে যায় এবং উড়তে থাকে। ব্যাপারটা আমাকে বেশ আনন্দ দেয়। সেটাই ভাবি আমি এবং কখনো দৈবাৎ যেমন ভালো লিখতে পারি, বলতে গেলে মাকোম্বারের গল্পটা তেমন। ফলে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি এবং লেখার অন্য ধরন বেছে নিই।


কোনো প্রশ্ন? চিতাবাঘটা? সেটা অধিবিদ্যার অংশ। ওটা ব্যাখ্যা করার জন্য কাউকে নিয়োগ করিনি আমি, অন্য বহু কিছুর জন্যও না। আমি অনেক কিছু জানি, কিন্তু আপনাদের বলতে বাধ্য নই সেসব। ওটা ওমের্তায়১৫ রেখে দিন। শব্দটা খুঁজে নেবেন। আমি ব্যাখ্যাকারী, অজুহাত দানকারী, গোয়েন্দা বা দালালদের পছন্দ করি না। কোনো লেখকেরই তাঁর নিজের লেখার জন্য এসবের কোনোটাই হওয়া উচিত নয়। এটা একটা ছোট পটভূমি জ্যাক, আমাদের দুজনের কারোরই কোনো ক্ষতি করবে না ওটা। আপনি মূল বিষয়টা দেখুন, বুঝতে পারছেন না? যদি না পারেন, খুব খারাপ।

তার অর্থ এমন নয় যে আপনি অন্য লেখকদের হয়ে ব্যাখ্যা করবেন না, কৈফিয়ত দেবেন না, কিংবা দালালি করবেন না। আমি এটা করেছি, এবং সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ছিলাম ফকনারের জন্য করতে পেরে। ইউরোপের ওরা যখন তাঁকে চিনত না, আমি তাদের বলেছি আমাদের ভেতর কী কারণে তিনি সেরা ইত্যাদি। তাঁর সাথে আমি ছিলাম অতিবিনয়ী এবং তিনি যতদূর যেতে পারেন সেভাবেই তৈরি করেছি তাঁর আত্মবিশ্বাস, কারণ তখনো পর্যন্ত বড় কোনো সুযোগ আসেনি তাঁর, অথচ খুব ভালো লিখছিলেন। কিন্তু আজকাল যখনই কয়েক প্রস্থ পান করে আসেন, ছাত্রদের বলতে থাকবেন আমার ভেতর কী সমস্যা, কিংবা তাঁর কাছে পাঠানো জাপানি বা যে কাউকেই পাঠানো হোক তাঁর কাছে, আমাদের স্থানীয় জিনিস তৈরি করার কথা বলবেন তাঁদের। এসবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমি, তবে বুঝতে পারি কী যে আজেবাজে জিনিস কয়েক ঢোঁক খেয়ে এসেছেন, মনে হয় যেন এসব বিশ্বাসও করেন তিনি। আপনি এইমাত্র জিজ্ঞেস করলেন তাঁর সম্পর্কে কী ধারনা আমার, যেমনটি অনেকেই জানতে চান, কিন্তু আমি সরাসরি জবাব দিই না, তাই বলছি আপনারা জানেন তিনি কতটা ভালো। ঠিক। আপনাদের জানা উচিত। তাঁকে নিয়ে যেটা সমস্যা সেটা হচ্ছে কখনো তিনি খুব বাজেভাবে নিজের সাথে প্রতারণা করেন। হতে পারে এটা কেবলই চাটনি বা সস। কিন্তু যখন প্রায়ই এসব তিনি তাঁর বইয়ের শেষদিকে ঢুকিয়ে দেন, তখন খারাপ দেখায়। তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন তবু এসব লিখতেই থাকেন, আর সেইসব চাটনিসুলভ লেখা যাঁরা পড়েন তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। মানে, যাঁরা লেখালেখির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেন। ভেবেছিলাম যদি আমি নিজেও একই ধরনের সস মাখিয়ে লেখাগুলো পড়ি তাহলে সুবিধা হবে, কিন্তু সেটাও কোনো কাজে আসেনি। এমন হতে পারে যে আমি যদি চৌদ্দ বছরের বালক হতাম, তাহলে কাজে আসত এই কায়দা। কিন্তু মাত্র একবছরের জন্য আমি চৌদ্দয় ছিলাম, তারপর অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য কাজে। এটাই ফকনার সম্পর্কে আমার ভাবনা। আপনি বলছেন, একজন পেশাদার লেখকের অবস্থান থেকে তাঁর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি আমি। খুব ভালো লেখক তিনি। তবে নিজের সাথে শত্রুতা করেন আজকাল। অতিরিক্ত চাটনি মেশান। অবশ্য 'দ্য বিয়ার' নামে সত্যিই চমৎকার একটা গল্প লিখেছেন তিনি। গল্পটা যদি আমি লিখতাম, আপনাদের তুষ্টি ও আমোদের জন্য এই বইতে ওটা দিতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু সেরকম আপনি লিখতে পারবেন না জ্যাক।


দেখলাম আপনারা যখন ফকনারের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন তখন অন্য লেখকদের কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেসব সম্পর্কে বলতে পারলে আরো সহজ ও মজা হতো। একজন আপাত নীরব মানুষ হিসেবে তিনি এত বেশি কথা বলেন যে তাঁকে সামলানো সহজ। আপনি যদি লেখক হন, কখনোই বেশি কথা বলবেন না, যদি না এসব লিখে ফেলার লোকটি আপনিই হয়ে থাকেন, এবং সেসব পুনরালোচনা করেন। তা না হলে ওরা ভুল বুঝবে। এটাই ভাববেন আপনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা একটা টেপ পেছন দিক থেকে চালিয়ে আপনাকে দেয়। তখন বুঝতে পারবেন কেমন অর্থহীন শোনায় সব। আপনি একজন লেখক, তাই না? ঠিক আছে, চুপ থাকুন এবং লিখুন। প্রশ্নটা কি যেন ছিল?

আমি কি মাদ্রিদে একদিনে তিনটা গল্প লিখেছিলাম, যেভাবে প্যারিস রিভিউ এবং হরাইজন ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছিল? হাঁ জনাব। আমি অনেক উত্তেজিত ছিলাম, বাদ দেন এসব, মহোদয়গন। অবাধ প্রাণশক্তিতে ভারাক্রান্ত ছিলাম আমি তখন। অথবা এরকম বলা উচিত যে এই প্রাণশক্তি আমার লেখার মধ্যে প্রবাহিত হয়ে এসেছিল। এরকম অবস্থা গুয়াদারামার১৬ (বেশ ঠান্ডা ছিল, জ্যাক) টাটকা বাতাসের সাথে ভালোভাবে শুকানো বাকালাও ভিসকাইনো১৭ মিশে এক ধরনের অস্পষ্ট নৈঃসঙ্গ সৃষ্টি করেছিল। প্রেমে পড়েছিলাম আমি, মেয়েটা ছিল বোলোনিয়ায়১৮, কোনোভাবেই ঘুমাতে পারতাম না, তখন ভাবলাম, তাহলে লিখে ফেলি না কেন। এভাবেই লিখলাম।


আপনার উল্লেখিত গল্পগুলো মাদ্রিদে বসে একদিনে লেখা হয় মে মাসের ষোল তারিখে, সেদিন সান ইসিদ্রো বুল ফাইটের সময় বরফ পড়ছিল। প্রথমে লিখি, 'দ্য কিলার্স,' এটা আগে লেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলাম। দুপুরের খাওয়ার পর একটু উষ্ণ হওয়ার জন্য বিছানায় যাই আমি, তখন লিখি 'টুডে ইজ ফ্রাইডে।' আমার মধ্যে এতবেশি রস ছিল, মনে হচ্ছিল যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি, তখন আমার কাছে লেখার মতো আরো ছয়টা গল্প। তাই কাপড় পরে পুরনো বুলফাইটার ক্যাফে ফরনোস-এ গেলাম। সেখানে কফি খেয়ে ফিরে এসে লিখি 'টেন ইন্ডিয়ানস।' এটা আমাকে বেশ বিষণ্ণ করে তোলে, তাই কিছু ব্র্যান্ডি খেয়ে বিছানায় যাই। খেতে ভুলে গিয়েছিলাম আমি, তখন ওয়েটারদের একজন আমাকে কিছু বাকালাও, একটা ছোট স্টেক, আলু ভাজা এবং এক বোতল ভালদেপেনইয়াস এনে দিয়েছিল।

যে মহিলাটি পেনশন১৯ চালাতেন, তিনি সবসময় দুশ্চিন্তা করতেন যে আমি যথেষ্ট পরিমাণে খাই না, তিনিই সেই ওয়েটারটিকে পাঠিয়েছিলেন। মনে আছে, বিছানার ওপর বসে খাবার ও ভালদেপেনইয়াস খাচ্ছিলাম আমি। ওয়েটারটি বলে, আরেকটা বোতল এনে দেবে ও। বলে, সিনোরা জানতে চেয়েছেন আমি সারারাত বসে লিখব কি না। বললাম, না, ভেবেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য ক্ষান্ত দেবো। ওয়েটারটি বলে, আর একটা লিখতে চেষ্টা করুন না কেন। আমি বলি, আমার কেবল একটাই লেখার কথা। সে বলে, বাজে কথা। আপনি ছয়টা লিখতে পারেন। বললাম, আগামিকাল চেষ্টা করব। ও বলে, আজ রাতেই চেষ্টা করুন। বুড়ি মালকিন কি কারণে খাবার পাঠিয়েছেন বলে মনে করেন আপনি?

ওকে বলি, 'আমি ক্লান্ত।' ও বলে, বাজে কথা (শব্দটা অর্থহীন ছিল না)। আপনি নগন্য তিনটা ছোট গল্প লিখে ক্লান্ত। একটা অনুবাদ করে শোনান তাহলে।


বললাম, 'আমাকে একা থাকতে দাও। তুমি যদি এখান থেকে না যাও কীভাবে লিখব আমি?' তাই বিছানায় বসে ভালদেপেনইয়াস খেতে খেতে ভাবছিলাম, কি হতভাগা এক লেখক আমি, যেরকম আশা করেছিলাম প্রথম গল্পটা সেরকমও হতো যদি।

জবাব দেওয়ার জন্য একই শব্দ ব্যবহার করছি যেগুলো চমৎকার মানুষ প্লিম্পটন২০ ভুল বা পুনরুক্তি এড়ানোর জন্য আমার ভেতর থেকে টেনে বের করে নিয়েছিলেন। আর যদি কোনো প্রশ্ন না থাকে আমরা কি এগিয়ে যাব?

মাথার ওপর আঘাতের মতো খুব বেশি চাপ লেখকদের জন্য খুব খারাপ। কখনো আপনি কয়েকমাস নষ্ট করেন যেটা আপনার হাতে থাকা উচিত ছিল এবং সেসময় হয়তো খুব ভালো লিখতে পারতেন। কিন্তু কখনো এই সব আঘাতের কারণে সংবেদনশীল ব্যাঘাতের বহুদিন পর একটা গল্প তৈরি হবে, যা এই ক্ষণস্থায়ী মস্তিষ্কের ক্ষতিকে ন্যায্যতা না দিয়ে বরং প্রশমিত করবে। 'অ্যা ওয়ে ইউ উইল নেভার বি' লেখা হয়েছিল ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টে, গল্পের মানুষটি, একটা গ্রাম ও গ্রামাঞ্চল উভয়ের সাথে সংঘটিত ক্ষতির প্রায় পনেরো বছর পর। কোনো প্রশ্ন নেই? আমি বুঝতে পারি। পুরোপুরি বুঝতে পারি। যা-ই হোক, শঙ্কিত হবেন না। আমরা এক মুহূর্তের নিরবতা আহবান করব না। সাদা স্যুটের মানুষটি কিংবা জালটির জন্যও নয়। মহোদয়গন, আমি লক্ষ্য করছি, বোধ হয় করতালির ছিটায় আকৃষ্ট হয়ে জলের ছিটার মতো মহিলাদের প্রবাহ এসে পড়েছে। আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা কোন গল্পগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী? যেসব লেখার প্রতি লেখকের পক্ষপাত থাকে, সেসব আপনাদের ওপর অবশ্যই চাপিয়ে দেবো না আমি। সেগুলোর কোনোটির ব্যাপারে কি খুব বেশি আগ্রহী আপনারা?


আপনারা কি 'দ্য কিলার্স' পছন্দ করেন? খুব ভালো। কিন্তু কেন? কারণ ওটাতে বার্ট ল্যাংকেস্টার২১ আর আভা গার্ডনার২২ আছেন বলে? চমৎকার। এখন আমরা নির্দিষ্ট কোনো একটা দিকে যাচ্ছি। মিস গার্ডনার তখন কেমন ছিলেন সেটা স্মরণ করা সবসময়ই আনন্দের। না, আমার কখনোই জনাব ল্যাংকেস্টারের সাথে দেখা হয়নি। তিনি দেখতে কেমন সেটা আমি বলতে পারব না, তবে সবাই বলে তিনি নাকি দুর্দান্ত। গল্পটার পটভূমি হচ্ছে, আমার একজন উকিল আছেন যাঁর ক্যানসার হয়েছিল, তাই দীর্ঘমেয়াদী কোনো কিছুর চেয়ে সবসময় নগদ টাকা চাইতেন তিনি। আপনারা তাঁর যুক্তিটা বুঝতে পারছেন আশা করি। তাই ছবিটাতে যখন আমার জন্য একটা অংশিদারিত্ব এবং অল্প কিছু নগদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলো, নগদেই বেশি চাইলেন তিনি। এতে আমাদের উভয় পক্ষের লোকসান হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তিনি মারা যান, ফলে ছবিটাতে থাকল কেবল আমার একটা অ্যাকাডেমিক স্বার্থ। তবে আমি যদি মিস গার্ডনারকে দেখতে চাইতাম এবং শ্যুটিং শুনতে চাইতাম, কোম্পানি আমার জন্য এটা মুফতে চালাতো। ছবিটা ভালো, এবং আমার গল্প থেকে এযাবত বানানো ছবির মধ্যে একমাত্র ভালো ছবি। এটার একটা কারণ হচ্ছে জন হিউস্টন২৩ ওটার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। হ্যাঁ, তাঁকে চিনি আমি। তাঁর সম্পর্কে লোকজন যা বলে তার সবকিছুই কি সত্য? না। তবে সবচেয়ে ভালো জিনিসগুলো সত্য। মজার না?


আপনি বলতে চাইছেন গল্পটার পটভূমি ছবিতে নেই? এটা খুব খেলোয়াড়োচিত হলো না, ইয়াং লেডি। আপনি দেখেননি উচ্চশ্রেণীর লোকজন এটা উপভোগ করছিল? কারণ, এটার একটা নোংরা ইতিহাস ছিল। এটা এখানে আনার ব্যাপারে আমার দ্বিধা আছে, কারণ গল্পটা কি বিষয় নিয়ে, তার কোনো সংবিধিবদ্ধ সীমারেখা নেই। বিচিত্র সংস্কৃতির মানুষ জিন টানি২৪ একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'আর্নেস্ট, সেই অ্যান্ড্রে এন্ডারসন২৫ 'দ্য কিলার্স'-এ ছিলেন না?' আমি বলেছিলাম, ছিলেন এবং সেই শহরটা ছিল সামিট, ইলিনয়, না না সামিট নয়, নিউ জার্সি। বিষয়টা সেখানেই ছেড়ে দিই আমরা। আবিষ্কার করার বহু বহু আগে গল্পটা নিয়ে ভেবেছিলাম, আর এটা ঠিকভাবে আবিষ্কার করার জন্য মাদ্রিদে যেমন ছিলাম সেরকম যতটুকু সম্ভব দুরে থাকতে হয়েছিল আমাকে। আমি এযাবত যা লিখেছি, গল্পটা থেকে বাদ দিয়েছি বোধ তার চেয়েও বেশি। এমনকি 'বিগ টু হার্টেড রিভার' থেকে বাদ দেওয়া যুদ্ধপ্রসঙ্গ থেকেও বেশি। পুরো শিকাগোকে বাদ দিয়েছিলাম, যা ২৯৫১ শব্দের মধ্যে লেখা কঠিন।

আরেকবার আমি ভালোভাবে ছেড়ে দিচ্ছিলাম 'অ্যা ক্লিন ওয়েল লাইটেড প্লেস' গল্পে। এটাতে সত্যিই ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছিল আমার ওপর। সব বাদ দিয়েছিলাম। তার মানে প্রায় যতদূর পর্যন্ত যাওয়া যায়। তাই সেটাই আঁকড়ে থাকি, তার পর থেকে আর কখনো ওটার প্রতি আগ্রহ বোধ করিনি।


আমার বিশ্বাস আপনারা আমাকে বুঝতে পারছেন মহোদয়গন। শুরুতেই যেরকম বলেছিলাম, আপনার যদি সহজাত দক্ষতা থাকে, ছোটগল্প লেখা শুরু করার জন্য আর কিছু দরকার নেই।

একটা গল্পের ব্যাপারে ঢাক পিটাতে পারি আমি এবং হলফ করছি সেটাই করব, সেটা হচ্ছে 'দ্য আনডিফিটেড।' তবে ওটা আমি ছেড়ে দিই সব ছেড়ে দেওয়া আর গ্রহণ করার মধ্যে পার্থক্যটা আপনাদের দেখাবার জন্য। যে গল্পগুলো আপনারা একবার ছেড়ে দেন সেগুলো গ্রহণ করাগুলোর মতো দ্বিতীয়বার পড়েন না। সেগুলো সহজে বোঝা যায়, আপনি একবার বা দুবার পড়ার পর আরও একবার পড়েন না। যাঁরা লেখেন তাঁদের সবার উদাহরণ আপনাদের দিতে পারতাম, কিন্তু লেখকরা পরস্পরের সাথে এরকম না করলেও তাঁদের যথেষ্ট শত্রু আছে। সব প্রকৃত ভালো লেখক ঠিকই জানেন, অন্য লেখকদের মধ্যে কি সমস্যা আছে। কোনো নিখুঁত লেখক হয় না যদি না তাঁরা অল্প কিছু লিখে তার পর সেটাকেই ধরে থাকেন। তবে অন্য লেখককে তাঁর জীবিতাবস্থায় বাইরের লোকের সামনে উত্যক্ত করা লেখকদের কাজ নয়। লেখক মারা গেলে তাঁকে আর লিখতে হয় না, তখন সবকিছু চলে। একটা জীবিত কুত্তার বাচ্চা হচ্ছে একটা মৃত কুত্তার বাচ্চার মৃত্যু। আমি লেখকদের মধ্যে বিবাদের কথা বলছি না। তাঁরা ঠিকঠাক থাকলেও হাস্যকর হতে পারেন। কেউ যদি আপনার চোখে আঙুল দেয়, আপনি প্রতিবাদ করবেন না। আপনিও তার চোখে আঙুল দেবেন। তিনি আপনাকে বিকৃত করলে আপনিও করবেন। এটা লোকজনকে [সাহিত্যের] জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখতে শেখায়। আমি যা বোঝাতে চাই তা হচ্ছে, এটা অন্য লেখকদের ব্যাপারে করবেন না, অর্থাৎ অন্য কাউকে করতে পারেন। জানি আপনাদের এসব করা উচিত হবে না, কারণ আমি একবার শেরউড এন্ডারসনের২৬ সাথে এরকম করেছিলাম। এটা করেছিলাম, কারণ আমি ছিলাম নীতিনিষ্ঠ, যদিও ব্যাপারটা খুব বাজে হয়েছে, ভেবেছিলাম যেভাবে সে লিখছে তাতে সব নোংরা করে ফেলবে, তাই ওর লেখাগুলো যে কি জঘন্য সেটা দেখিয়ে ওকে বোকা বানিয়ে সেখান থেকে বের করে আনতে পারব। তাই আমি 'দ্য টরেন্টস অভ স্প্রিং' লিখলাম। কাজটা ছিল নিষ্ঠুর, এতে কিছুই ভালো হয়নি, সে খারাপ থেকে আরো বাজে লেখা লিখতে থাকে। আমার কি এমন আসে যায় ও যদি খারাপ লেখে? কিছুই না। কিন্তু তখন নীতিনিষ্ঠ আমি বন্ধুর চেয়ে নিজের লেখার প্রতি বেশি বিশ্বস্ত। যদি বুঝতে পারতাম এভাবে কাউকে সোজা করা যাবে এবং ঠিকভাবে লিখতে সাহায্য করবে, সেসময় যে কাউকে আঘাত করতে পারতাম আমি, খুন করা নয়, কেবল গুলি করা। এখন আমি জানি কোনো লেখকের জন্য কখনোই কিছু করতে পারবেন না আপনি। শুরু থেকেই ওদের ভেতরে থাকে ধ্বংসের বীজ, লেখকদের ব্যাপারে যা করা উচিত, সেটা হচ্ছে দেখা হলে ওদের সাথে মানিয়ে চলা, এবং চেষ্টা করা যাতে দেখা না হয়। কয়েকজন ছাড়া সবাই এবং যারা মারা গেছে তারা ছাড়া সবার সাথে। আগেই যেরকম বললাম, কেউ মারা গেলে যেকোনো কিছু চলে যদি সেসব সত্য হয়।


আমি দুঃখিত যে এন্ডারসনকে নিয়ে পড়েছি। কাজটা খুব নির্মম হয়েছে, আমি একটা কুত্তার বাচ্চা। একটা কথা বলতে পারি, তখন নিজের প্রতিও নির্মম ছিলাম আমি। তবে এটা কোনো অজুহাত নয়। সে ছিল আমার বন্ধু, ওর সাথে এমন আচরণ করার জন্য সেটাও কোনো অজুহাত হতে পারে না। কোনো প্রশ্ন আছে? থাকলে অন্য কোনো সময় জিজ্ঞেস করবেন।


এটা আমাদের আরেকটা গল্পের দিকে নিয়ে যায়, 'দ্য ওল্ড ম্যান।' এটার পটভূমি ছিল ১৯১৮ সালে আমি যখন মিলানের হাসপাতালে যেতাম সেখান থেকে সান সিরোর ঘোড়দৌড়ে এবং প্যারিসের রেসের মাঠে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করে কাটাতাম-সেই সময়গুলো। অর্থাৎ চেষ্টা করা বলতে রেসের ফলাফলের কথা বলছি আমি। কেউ কেউ বলে যে গল্পটা হার্নেস রেসিং২৭ নিয়ে লেখা শেরউডের 'আই অ্যাম অ্যা ফুল' নামের একটা গল্প থেকে এসেছে। এটা বিশ্বাস করি না আমি। আমার মত হচ্ছে, গল্পটা এসেছে আমি ভালোভাবে চিনতাম এমন একজন জকি এবং বেশ কয়েকটা ঘোড়ার কাছ থেকে, এগুলোর একটার সাথে আমার প্রেমও ছিল। গল্পে একটা বালকের চরিত্র উদ্ভাবন করেছিলাম আমি, আর শেরউডের গল্পের বালকটা সে নিজেই। আপনারা যদি দুটো গল্পই পড়েন, তাহলে আপনাদের নিজস্ব মতামত তৈরি হতে পারে। যেটাই হোক না কেন, আমার কোনো সমস্যা নেই। শেরউড যা কিছু ভালো লিখেছে সেসব রয়েছে দুটো বইতে, ওয়াইনসবার্গ, ওহাইয়ো এবং দ্য ট্রাম্ফ অভ দ্য এগ। দুটোই আপনাদের পড়া উচিত। বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছু জেনে ফেলার আগে এদুটো ভালো লাগবে। শেরউড সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জিনিস, সে এমন এক ধরনের মানুষ ছিল প্রথমদিকে যার নাম শুনলে মনে আসবে শেরউড ফরেস্টের২৮ কথা, আবার বব শেরউডের২৯ নাম এলে আপনি ভাববেন একজন নাট্যকারের কথা।

অন্য যে গল্পগুলো এই বইতে আপনারা পাবেন সেগুলো আমার পছন্দের। আপনারাও যদি পছন্দ করেন, তাহলে খুশি হব। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের সাথে থাকতে পেরে আনন্দ পেয়েছি।

জুন ১৯৫৯ লা কনসুলা, চুরিয়ানা, মালাগা, স্পেন


অনুবাদকের টীকা:

১. ইন্ডিয়ানাপোলিস থেকে স্পেনে অভিবাসী এবং ইয়েল ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট উইলিয়াম নাথান ডেভিস ছিলেন লন্ডন ও মাদ্রিদের এক ধনাঢ্য শিল্পরসিক। তাঁর স্ত্রী বাল্টিমোরের অ্যানি বেকওয়েল ডেভিস ছিলেন ফরাসি বংশোদ্ভ‚ত পক্ষিবিশারদ ও পেইন্টার জন জেমস অডুবানের আত্মীয়া।

২. লুইস মিগেল ডমিংগিন (১৯২৬-১৯৯৮) বিশ শতকের মাঝামাঝি বিশ্বের প্রধান বুল ফাইটারদের একজন।

৩. আন্তোনিও হিমেনে অর্দোনিস (১৯৩২-১৯৯৮) স্পেনিশ ম্যাটাডর, ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকের প্রথম শ্রেণির বুল ফাইটার। জীবনে দুই হাজারের বেশি ষাঁড়ের সাথে লড়েছেন তিনি। প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী ডমিংগিনের বোনকে বিয়ে করার সুবাদে এই দুই প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন শ্যালক-ভগ্নিপতি। তাঁর বাবা কায়েতানো অর্দোনিসও ছিলেন বুল ফাইটার। তাঁর লড়াইয়ের কলাকৌশল দেখে মুগ্ধ হেমিংওয়ে তাঁকে চিত্রিত করেছিলেন দ্য সান অলসো রাইজেস উপন্যাসে।

৪. হেমিংওয়েকে লেখা স্ক্রিবনারের চিঠি, ২৪ জুন, ১৯৫৯

৫. গারট্রুড স্টাইন (১৮৭৪-১৯৪৬): প্যারিসে বসবাসকারী আমেরিকান লেখিকা এবং হেমিংওয়ের প্যারিস জীবনের প্রথমদিকের পৃষ্ঠপোষক। তাঁর বাড়ি ছিল মডার্নিস্ট লেখকশিল্পীদের কেন্দ্রবিন্দু।

৬. ২৩ স্কিডু শব্দটি দিয়ে এমন একজনকে বোঝায় যে ক্যালিফোর্নিয়ার পানামিন্ট পর্বতের স্কিডু নামের খনি শহর ২৩টি সালোঁর সবকটিতে পান করে মাতাল হওয়া উপভোগ চায়।

৭. বলরুম বানানা– কোনো অবিশ্বস্ত ছোটখাট জিনিসকে হেমিংওয়ে এভাবেই বলতেন।

৮. খসড়ায় গল্পটা শুরু হয়েছিল একটা মজার পার্শ্বগল্প দিয়ে, যেটাকে হেমিংওয়ে বলেছেন, 'বক্সিংয়ের দর্শন সম্পর্কে চমৎকার উদঘাটন।' আর ফিটজেরাল্ড এই অংশটাকেই বলেছিলেন 'ওল্ড চেস্টনাট'।

৯. উইলিয়াম রে লং (১৮৭৮-১৯৩৫) আমেরিকান পত্রিকা, ম্যাগাজিন, চলচ্চিত্র সম্পাদক ও লেখক। ১৯১৯ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত কসমোপলিটান ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১০. এখানে হেমিংওয়ে এমন একটা অশিষ্ট শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেটা বাংলায় ঠিকভাবে আনা যায় না।

১১. এডওয়ার্ড উইকস আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

১২. এলেরি সেজউইক আটলান্টিক পত্রিকা কিনে নেন ১৯০৮ সালে। তখন ওটার সার্কুলেশন ছিল ১৫ হাজার আর বার্ষিক লোকসান ছিল পাঁচ হাজার ডলার। পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে কাগজটিতে আমূল পরিবর্তন এনে সার্কুলেশন এক লক্ষ ৩৭ হাজার কপিতে উন্নীত করতে পেরেছিলেন তিনি। এর মধ্যে তিনি বহু নতুন লেখককে আবিষ্কার করেন। হেমিংওয়ের ফিফটি গ্র্যান্ড তিনিই প্রথম প্রকাশ করেছিলেন পত্রিকাটির জুলাই ১৯২৭ সংখ্যায়।

১৩. উইলফ্রেড চার্লস হেইনজ (১৯১৫-২০০৮) আমেরিকান ক্রীড়ালেখক, সমর সাংবাদিক।

১৪. প্রথম জীবনে (১৯২০ দশক) প্যারিসবাসের সময় কিছু অর্থাগমের জন্য ঘোড়দৌড়ের মাঠে বাজি ধরতেন হেমিংওয়ে। সেসময় রেসের ঘোড়াকে উত্তেজক ওষুধ খাওয়ানোর ব্যাপারটা বেশ চালু ছিল। ওষুধ প্রয়োগ করা ঘোড়াগুলোকে শনাক্ত করার জন্য সনাতন পদ্ধতিতে ওগুলোর লালা পরীক্ষা করা হতো তখন।

১৫. ইতালিয় ভাষায় ওমের্তা অর্থ নিরবতার নীতিমালা, বহিরাগতের কাছে নীরব থাকা, বিশেষ করে কোনো অপরাধ তদন্তের সময় নিরবতা বজায় রেখে তদন্তে অসহযোগিতা করার জন্য যা মেনে চলতে হয়।

১৬. স্পেনের পর্বতশ্রেণী।

১৭. কড মাছের শুটকি।

১৮. ইতালির উত্তরাঞ্চলের একটা শহর।

১৯. স্পেনের একটা হোস্টেল।

২০. জর্জ প্লিম্পটন (১৯২৭-২০০৩) আমেরিকান সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্য সম্পাদক এবং অপেশাদার ক্রীড়াবিদ।

২১. বার্টন স্টেফান ল্যাংকেস্টার (১৯১৩-১৯৯৪) প্রথম জীবনে সার্কাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকজীবন, তারপর ব্রডওয়ের নাট্যাভিনয় হয়ে হলিউডের অভিনেতা। হেমিংওয়ের 'দ্য কিলার্স' অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় অভিনয় করে ল্যাংকেস্টার প্রথম সাফল্য পান।

২২. আভা গার্ডনার (১৯২২-১৯৯০) হলিউডের অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী। হেমিংওয়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত 'দ্য কিলার্স' এবং 'দ্য স্নোজ অভ কিলিমাঞ্জারো' ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

২৩. জন হিউস্টন (১৯০৬-১৯৮৭) আমেরিকান চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা।

২৪. জেমস জোসেফ টানি (১৮৯৭-১৯৭৮) আমেরিকান পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা। ১৯২৬ থেকে ২৮ পর্যন্ত বিশ্ব হেভিওয়েটের শিরোপাটি ছিল তাঁর।

২৫. অ্যান্ড্রে এন্ডারসন (১৮৯০-১৯২৬) আমেরিকান মুষ্টিযোদ্ধা।

২৬. শেরউড এন্ডারসন (১৮৭৬-১৯৪১): আমেরিকান ঔপন্যাসিক ও গল্পকার। সদ্যবিবাহিত হেমিংওয়ে ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা করলে ইউরোপফেরত ঔপন্যাসিক শেরউড এন্ডারসন তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন যে লেখকদের জন্য প্যারিস হচ্ছে আদর্শ জায়গা। তরুণ লেখক হেমিংওয়ের উচ্চ প্রশংসা করে গারট্রুড স্টাইন, এজরা পাউন্ড, সিলভিয়া বিচ প্রমুখের কাছে চিঠি লিখে দিয়েছিলেন এন্ডারসন, ফলে প্যারিসের সাহিত্যিক মহলে ঢুকতে তাঁকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি।

২৭. একধরনে ঘোড়দৌড়, যেখানে ঘোড়ার পেছনে জোতা থাকে একটা চালকসহ দুই চাকার গাড়ি।

২৮. শেরউড ফরেস্ট: রবিনহুডের কাহিনীর সাথে জড়িত ইংল্যান্ডের নটিংহ্যামের অরন্য।

২৯. রবার্ট শেরউড (১৮৯৬-১৯৫৫) আমেরিকান নাট্যকার ও চিত্রনাট্য নির্মাতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ