Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Widget

চারজন মানুষ ও একখানা তক্তপোশ | প্রমথনাথ বিশী

একদিন বিকাল-বেলা এক সরাইখানায় চারজন পথিক আসিয়া পৌঁছিল৷ সরাইখানার মালিক তাহাদের যথাসম্ভব আদর অভ্যর্থনা করিয়া বসাইল৷ পথিকরা অনেক দূর হইতে আসিতেছে, পথশ্রমে অত্যন্ত ক্লান্ত, গত রাত্রি তাহাদের সকলেরই বৃক্ষতলে কাটিয়াছে, আজ সরাইখানায় বিশ্রাম ও আহার করিতে পারিবে আশায় উৎফুল্ল হইয়া উঠিল৷ তাহারা একটি কক্ষে বসিয়া আহার করিয়া লইল এবং তারপরে পরস্পরের পরিচয় লইতে লাগিল৷ তাহাদের কেহ কাহাকেও চিনিত না—এই তাহাদের প্রথম সাক্ষাৎ৷

প্রথম পথিক বলিল যে, সে একজন শিক্ষক৷ এখন বিদ্যালয়ের ছুটি, তাই সে তীর্থযাত্রায় বাহির হইয়াছিল৷ হিমালয়ের পাদদেশে পশুপতিনাথের পীঠস্থান৷ কয়েকজন সঙ্গীর সাথে সে সেখানে গিয়াছিল৷ দেবদর্শন সারিয়া ফিরিবার পথে তাহারা পথ হারাইয়া এক বনের মধ্যে ঢুকিয়া পড়ে৷ রাত্রে তাহারা এক গাছের তলায় আশ্রয় লইতে বাধ্য হয়৷ ভোর-বেলা যখন সে জাগিল, দেখিল যে তাহাদের সঙ্গীরা নাই, তৎপরিবর্তে তাহাদের কঙ্কাল কয়খানা পড়িয়া আছে৷ বোধ হয় কোন শ্বাপদে খাইয়া গিয়াছে৷ কিন্তু সে একা বাঁচিল কিরূপে? তখন তাহার মনে পড়িল সে যে শিক্ষক, সে যে জাতিগঠনের রাজমিস্ত্রি—শ্বাপদ বোধ হয় সেই খাতিরেই তাহাকে ছাড়িয়া দিয়াছে৷ যদি এ শ্বাপদটা তাহার ভূতপূর্ব ছাত্র হইত, তবে কি আর তাহার রক্ষা ছিল? কিম্বা এমনও হইতে পারে যে হাজার ছাত্র শাসাইয়া এমন শক্তি সে অর্জন করিয়াছে—সামান্য শ্বাপদে তাহার কি করিবে? যাই হোক, আর যে-কারণেই হোক, সে পুনরায় চলিতে আরম্ভ করিল৷ সারা দিন চলিবার পরে সে এই সরাইখানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে৷ সংক্ষেপে ইহাই তাহার পরিচয়৷

তখন দ্বিতীয় পথিক আরম্ভ করিল৷ সে বলিল যে, সে একজন সাহিত্যিক৷ গোরক্ষপুরে সাহিত্য সম্মেলনের অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে সে গিয়াছিল৷ একটি বৃহৎ অট্টালিকায় যখন মহতী সভার অধিবেশন আরম্ভ হইয়াছে এমন সময়ে এক কালান্তক ভূমিকম্প সুরু হইল৷ ফলে অট্টালিকার ছাদখানি পড়িয়া সকলেই মারা গেল—কেবল সে অক্ষতদেহে রক্ষা পাইয়াছে৷

তাহার শ্রোতারা বিস্ময়ে বলিল—তাহা কিরূপে সম্ভব?

সাহিত্যিক বলিল, আপনারা জানেন না, আর জানিবেনই বা কিরূপে, আপনারা তো সাহিত্যিক নহেন, সাহিত্যিকদের মাথা বড় শক্ত৷ হেন ছাদ নাই—খসিয়া পড়িয়া যাহা তাহাদের মাথা ফাটাইতে সমর্থ, হেন ভূমিকম্প নাই যাহাতে তাহারা টলে, হেন অগ্নিকাণ্ড নাই—যাহাতে তাহারা পোড়ে৷

শিক্ষক বলিল—তবে অন্য সবাই মরিল কেন?

সাহিত্যিক বলিল—সে মহতী সাহিত্য সভায় আমিই ছিলাম একমাত্র সাহিত্যিক৷ ইহা শুনিয়া আপনারা বিস্মিত হইতেছেন—কিন্তু ইহা নিশ্চয় জানিয়া রাখুন সাহিত্য সভায় পারতপক্ষে সাহিত্যিকরা কখনো যায় না—এক সভাপতি ব্যতীত৷ তাই তাহারা পিষিয়া মারা গেল—আর আমি যে শুধু বাঁচিয়া রহিলাম তা-ই নয়, আমার মাথায় লাগিয়া একখানা পাথরের টুকরা চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া ধূলি হইয়া গেল৷ এই সেই ধূলি৷

এই বলিয়া সে পকেট হইতে এক কৌটা ধূলি বাহির করিয়া দেখাইল৷ তারপরে বলিল—সাহিত্যিকদের বেলায় শিরোধূলি কথাটাই অধিকতর প্রযোজ্য৷ তারপরে গোরক্ষপুর হইতে বাহির হইয়া পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়াছি৷ ইহাই আমার পরিচয়৷

তৃতীয় পথিক বলিল—মহাশয়, আমি একজন চিকিৎসক৷ হজরতপুরে মহামারী দেখা দিয়াছে শুনিয়া সেখানে আমি গিয়াছিলাম৷ সেখানে কোন চিকিৎসক ছিল না৷ আমি সেখানে গিয়া নিজেকে বিজ্ঞাপিত করিবামাত্র হজরতপুরের সমস্ত অধিবাসী নগর ছাড়িয়া পলায়ন করিল৷ তাহারা যাইবার সময়ে বলিয়া গেল যে মহামারীর হাতে যদি বা বাঁচি—মহাবৈদ্যের হাত হইতে রক্ষা করিবে কে?

নগরের মধ্যে ঘুরিতে ঘুরিতে এক অতি কুৎসিত ও বীভৎস বৃদ্ধকে দেখিতে পাইয়া বলিলাম—তুমি পালাও নাই কেন?

সে বলিল—আমার ভয়েই তো সকলে পালাইতেছে, আমি পালাইতে যাইব কেন? আমার নাম মহামারী৷ আমি তাহাকে বলিলাম যে, তোমার গর্ব বৃথা, সকলে আমার ভয়েই পালাইয়াছে, আমার নাম মহাবৈদ্য৷ ইহা শুনিবামাত্র সে প্রাণভয়ে পলায়ন সুরু করিল৷ কিছুকাল পরে দেখি হজরতপুরের নাগরিকগণ মহামারীর সঙ্গে সন্ধি করিয়া আমার বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করিয়াছে৷ তাহারা বলিল—মহামারী আমাদের শত্রু নয়, মিত্র যেহেতু তাহার কৃপাতেই আমরা অক্ষয়স্বর্গ লাভ করিবার সৌভাগ্য পাইয়া থাকি৷ তাহাদের সম্মিলিত শক্তির সম্মুখে আমি দাঁড়াইতে না পারিয়া পরম ভাগবত ইংরাজ সৈন্যের মতো দৃঢ়পরিকল্পনানুযায়ী পশ্চাদপসরণ করিতে করিতে এখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি৷ বন্ধুগণ, ইহাই আমার ইতিহাস৷

তখন চতুর্থ পথিকের পরিচয় দিবার পালা৷

সে আরম্ভ করিল—মহাশয়, আমি গঙ্গাস্নানে গিয়াছিলাম৷ সারা দিন উপবাসী থাকিয়া সন্ধ্যায় যখন স্নান করিতে নামিব এমন সময়ে শুনিতে পাইলাম কে যেন বলিতেছে—বৎস, তুমি যথেষ্ট পুণ্য সঞ্চয় করিয়াছ—এখন স্নান করো, করিবামাত্র তোমার মুক্তি হইয়া যাইবে, আর তোমাকে পৃথিবীতে বাস করিতে হইবে না৷

সে বলিল—মহাশয়, মুক্তি কাম্য ইহা জানিতাম, কিন্তু কখনো সদ্য মুক্তির সম্ভাবনা ঘটে নাই৷ আমি বিষম ভীত হইয়া পড়িলাম এবং গঙ্গাস্নান না করিয়াই পলায়ন করিলাম৷ রাত্রে পথ ভুলিয়া গেলাম, কোথা হইতে যে কোথায় গেলাম জানি না—তারপর ঘুরিতে ঘুরিতে এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছি৷

তাহার কাহিনী শুনিয়া অপর তিন পথিক বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল—আপনার পরিচয় কি?

ইহা শুনিয়া চতুর্থ পথিক বলিল—আমি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা—যাহার বাংলা ‘সিনেমা স্টার’৷

তখন সকলে একবাক্যে স্বীকার করিল—তাহার অভিজ্ঞতাই সব চেয়ে বিস্ময়কর—তবে সিনেমা স্টারের পক্ষে বিস্ময়ের কিছুই নাই৷

এই ভাবে পরস্পরের পরিচয় সাধনের পালা উদযাপিত হইতে চারজনে মিলিয়া গল্পগুজব আরম্ভ করিল চারজনেই আশা করিল যে, রাতটা আমোদ-আল্হাদে ও আরামে কাটাইতে পারিবে৷ এমন সময়ে সরাইখানার মালিক প্রবেশ করিল৷ সে অতিথিদিগকে বিশেষ আপ্যায়ন করিয়া সেখানে যতদিন খুশী কাটাইতে অনুরোধ করিল, বলিল—তাহাদের যাহাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে সে দৃষ্টি রাখিবে৷ তারপরে কি যেন মনে পড়াতে সে একটু হাসিয়া বলিল—এই সরাইখানার সমস্ত ঘরই অধিকৃত—কেবল একটিমাত্র ঘর খালি আছে৷

পথিকরা বলিল—একটি ঘরেই আমাদের চলিবে৷

সরাইখানার মালিক বলিল—ঘরটি নীচের তলাতে, কাজেই একটু স্যাঁৎসেতে—

পথিকরা বলিল—তাহাতেই বা ক্ষতি কি? ঘরে তক্তপোশ আছে তো?

মালিক বলিল—তক্তপোশ অবশ্যই আছে—কিন্তু একখানা মাত্র, কাজেই আপনাদের তিনজনকে মেঝেতে শুইতে হইবে, সেই জন্যই স্যাঁতসেতে মেঝের উল্লেখ করিয়াছিলাম৷ ইহা ছাড়া আর কোন অসুবিধা নাই৷ আপনাদের মধ্যে কে তক্তপোশে শুইবেন তাহা আপনারা স্থির করিয়া ফেলুন, আমি আর কি বলিব? এই বলিয়া সে প্রস্থান করিল৷

তখন পথিক চারজন বিব্রত হইয়া পড়িল৷ কে বা তক্তপোশে শুইবে আর কারা বা মেঝেতে শুইবে! তাহারা সেই ঘরটায় গিয়া দেখিল সরাইখানার মালিকের কথাই সত্য৷ ঘরের মেঝে বিষম ভেজা, তার উপরে আবার এখানে সেখানে গর্ত, ইতস্তত অরসুলা, ইঁদুর, ছুঁচো নির্ভয়ে পরিভ্রমণশীল, এক কোণে আবার একটা সাপের খোলসও পড়িয়া আছে৷ আর এক দিকে একজনের মাপের একখানা তক্তপোশ—সেটাও আবার অত্যন্ত জীর্ণ৷

চারজনে গালে হাত দিয়া বসিয়া পড়িল—তাহাদের দুরবস্থা দেখিয়া ছুঁচোগুলো চিকচিক শব্দে পলায়ন করিল—যেন ফিক ফিক করিয়া হাসিয়া উঠিল৷

কে তক্তপোশে শুইবে? কাহার শরীর খারাপ? চারজনেরই শরীরের অবস্থা সমান৷

তখন শিক্ষক বলিয়া উঠিল—এক কাজ করা যাক৷ আমাদের মধ্যে যাহার জীবন সমাজের পক্ষে সবচেয়ে দরকারী—সে-ই তক্তপোশে শয়ন করিবে, অপর তিনজনকে মেঝেতে শুইতে হইবে৷

ইহা শুনিয়া তিনজনে ত্রিগপৎ বলিয়া উঠিল—ইহা অত্যন্ত সমীচীন—আর ইহা শিক্ষকের যোগ্য কথা বটে৷ কিন্তু কাহার জীবন সমাজের পক্ষে সবচেয়ে দরকারী তাহা কেমন করিয়া বোঝা যাইবে? পরীক্ষার উপায় কি?

তখন সাহিত্যিক বলিল—আমি একটা উপায় নির্দেশ করিতে পারি৷ আসিবার সময়ে দেখিয়া আসিয়াছি কাছেই একটা গ্রাম আছে৷ সেখানে আমাদের কেহ চেনে না৷ আমরা চারজন চার পথে সেই গ্রামে প্রবেশ করিব৷ নিজেদের অত্যন্ত বিপন্ন বলিয়া পরিচয় দিব—ইহার ফলে গ্রামের লোকেদের কাছে যে সবচেয়ে বেশি সাহায্য ও সহানুভূতি পাইবে—বুঝিতে পারা যাইবে তাহারই জীবনের মূল্য সর্বাধিক৷ তক্তপোশে শয়ন করিবার অধিকার তাহারই৷

সাহিত্যিকের উদ্ভাবনী শক্তি দেখিয়া তিনজনে স্তম্ভিত হইয়া গেল৷

তখন চিকিৎসক বলিল—তবে আর বিলম্ব করিয়া কাজ কি? এখনো অনেকটা বেলা আছে—এখনি বাহির হইয়া পড়া যাক, রাত্রি প্রথম প্রহরের মধ্যেই ফিরিতে হইবে৷

সিনেমা স্টার বলিল—আশা করি, আমরা সকলেই নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ফিরিয়া আসিয়া সত্য কথা বলিব৷

ইহা শুনিয়া শিক্ষক বলিয়া উঠিল—হায় হায়, যদি মিথ্যা কথাই বলিতে পারিব তবে আজ কি আমার এমন দুর্দশা হইত!

তখন সকলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রামের দিকে বিভিন্ন পথে প্রস্থান করিল৷

রাত্রি প্রথম প্রহর উত্তীর্ণ হইবার পূর্বেই চার বন্ধু ফিরিয়া আসিল৷ সকলে একটু বিশ্রাম করিয়া লইয়া সদ্যলব্ধ অভিজ্ঞতার ধাক্কা সামলাইয়া লইয়া নিজের নিজের পরিভ্রমণ কাহিনী বলিতে সুরু করিল৷

প্রথমে শিক্ষক বলিতে আরম্ভ করিল৷ সে বলিল—আমি উত্তর দিকের পথ দিয়া গ্রামে প্রবেশ করিলাম৷ কিছুদূর গিয়া একটি সম্পন্ন গৃহস্থ-বাড়ি দেখিলাম—ভাবিলাম এখানেই আমার ভাগ্য পরীক্ষা করিব৷ বাড়ীর দরজায় উপস্থিত হইবামাত্র সেই দয়ালু গৃহস্থ আমাকে বসিবার জন্য একটি মোড়া আগাইয়া দিল৷ আমি তাহাকে নমস্কার করিয়া উপবেশন করিলাম৷ সদাশয় গৃহস্থ আমাকে আপ্যায়িত করিয়া আমার পরিচয় শুধাইল৷ আমি বলিলাম যে, আমি একজন বিদেশী শিক্ষক—পথ ভুলিয়া এখানে আসিয়া পড়িয়াছি৷

ইহা শুনিবামাত্র গৃহস্থ চাকরকে ডাকিয়া বলিল—ওরে রামা, মোড়াটা ঘরে তুলিয়া রাখ, বাহিরে থাকিলে নষ্ট হইয়া যাইবে৷ আমি পরিত্যক্ত মোড়া হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম৷ বলিলাম—আজ আপনার বাড়ীতে রাত্রি কাটাইবার অনুমতি প্রার্থনা করি৷ ইহা শুনিয়া গৃহস্থ বলিল—তোমাকে যে আশ্রয় দিব তাহার স্থানাভাব৷ আমি বলিলাম যে, অন্যজায়গা যদি না থাকে, তবে অন্তত আপনার গোয়ালঘরে নিশ্চয় স্থান হইবে৷ ইহা শুনিয়া গৃহস্থ বলিল—গোয়ালঘরেই বা স্থান কোথায়? দশ-বারোটা গোরু আছে৷ কোনটাকে বাহিরে রাখিতে সাহস হয় না—রাত্রে বাঘের ভয়৷ আজকাল গোরুর যা দাম, জানো তো?

আমি কহিলাম—গোরুর চেয়ে শিক্ষকের জীবনের মূল্য কম?

সে বলিল—কি যে বলো? একটা যেমন তেমন গোরুও আজকাল পাঁচ শো টাকার কম মেলে না৷ আর দশ টাকা হইলেই একটি শিক্ষক মেলে৷ এখন তুমিই বিচার করিয়া দেখো৷ 

আমি বলিলাম—কিন্তু আমরা যে জাতিগঠন করি!

বৃদ্ধ হাসিয়া বলিল—তার মানে তোমরা গোরু চরাও৷ কিন্তু রাখালের চেয়ে গোরুর মূল্য অনেক বেশি৷

আমি বলিলাম—আপনার ছেলে নিশ্চয় শিক্ষকের কাছে পড়ে!

সে বলিল—পড়িত, এখন পড়ে না৷ এক সময়ে তাহার জন্য একজন শিক্ষক রাখিয়াছিলাম৷ সে এখন আমার গোরুর রাখালী করে—কারণ সে দেখিয়াছে যে, শিক্ষকের চেয়ে রাখালের বেতন ও সম্মান অনেক বেশি৷ তবে তুমি যদি রাখালী করিতে চাও, আমি রাখিতে পারি—আমার আর একজন রাখালের আবশ্যক৷ আর তোমাকে একটা পরামর্শ দিই, গোরুই যদি চরাইবে তবে এমন গোরু চরাও যাহারা দুধ দেয়৷ দুধ দেয় না এমন মানুষ গোরু চরাইয়া কি লাভ? যাই হোক, তোমার ভালমন্দ তুমি বুঝিবে—তবে বাপু এখানে তোমার জায়গা হইবে না৷ ইহা শুনিয়া বুঝিতে পারিলাম যে শিক্ষকের জীবনের কি মূল্য৷ সেখান হইতে সোজা সরাইখানায় ফিরিয়া আসিলাম৷ এই বলিয়া সে নীরব হইল৷

তখন চিকিৎসক তাহার কাহিনী আরম্ভ করিল৷ সে বলিল—দক্ষিণদিকের পথ দিয়া আমি গ্রামে প্রবেশ করিয়া একটি অট্টালিকা দেখিতে পাইলাম৷ অনুমানে বুঝিলাম বাড়ীটি কোন ধনীর—কিন্তু বাড়ীর মধ্যে ও আশেপাশে লোকজনের উদ্বিগ্ন চলাচল দেখিয়া কেমন যেন সন্দেহ উপস্থিত হইল৷ এমন সময়ে এক ব্যক্তি বাহিরে আসিতেছিল, তাহাকে শুধাইলাম—মশায়, ব্যাপার কি? এ বাড়ীতে আজ কিসের উদ্বেগ?

সে বলিল—আপনি নিশ্চয় বিদেশী, নতুবা নিশ্চয় জানিতেন৷ তবে শুনুন, এই বলিয়া সে আরম্ভ করিল—এই বাড়ী গ্রামের জমিদারের৷ তাহার একমাত্র পুত্র মৃত্যুশয্যায়—এখন শেষ মুহূর্ত সমাগত—যাহাকে সাধারণ ভাষায় বলা হইয়া থাকে যমে মানুষে টানাটানি—তাহাই চলিতেছে৷ বোধ করি যমেরই জয় হইবে৷

আমি বলিলাম—এ রকম ক্ষেত্রে যমেরই প্রায় জয় হইয়া থাকে—তার কারণ চিকিৎসক আসিয়া যোগ দিতেই যমের টান প্রবলতর হইয়া ওঠে ইহার প্রমাণ দেখিতে পাইবেন যে চিকিৎসক আসিয়া না পৌঁছানো পর্যন্ত রোগী প্রায়ই মরে না৷ কিন্তু তারপরেই কঠিন৷

সে লোকটি বিস্মিত হইয়া কহিল—এ তথ্য আপনি জানিলেন কি করিয়া?

আমি সগর্বে বলিলাম—আমি যে একজন চিকিৎসক৷

তখন সে বলিল—আপনার ভাগ্য ভাল, এ গ্রামের চিকিৎসকেরা কেহই রোগীকে নিরাময় করিতে পারে নাই—আপনি গিয়া চেষ্টা করিয়া দেখুন৷ সফল হইলে প্রচুর ধনরত্ন লাভ করিবেন৷

আমি ভাবিলাম, সত্যই আমার ভাগ্য ভালো৷ একবার চেষ্টা করিয়া দেখা যাক৷ সফল হইলে আর সরাইখানার ভাঙা তক্তপোশে রাত্রি না কাটাইয়া জমিদার-বাড়ীতেই আদরে রাত্রিযাপন করিতে পারিব৷

তখন আমি ভিতরে গিয়া নিজেকে চিকিৎসক বলিয়া বিজ্ঞাপিত করিয়া রুগী দেখিতে চাহিলাম৷ আমাকে চিকিৎসক জানিতে পারিয়া জমিদারের নায়েব সসম্ভ্রমে বসিতে দিল৷ সম্যক পরিচয় পাইয়া বলিল—হাঁ, রুগীর অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক৷ তবে আপনি যদি তাহাকে আরোগ্য করিতে পারেন তবে দশ হাজার মুদ্রা ও সরিফপুর পরগণা পাইবেন৷ আমি উৎফুল্ল হইয়া উঠিলাম৷ তখন নায়েবের আদেশে একজন ভৃত্য আমাকে ভিতর মহলে লইয়া চলিল৷ পথে অনেকগুলি ছোট বড় কক্ষ পার হইয়া যাইতে হয়—একটি প্রায়ান্ধকার কক্ষে পাশাপাশি তিন-চারটি লোক কাপড় মুড়ি দিয়া ঘুমাইতেছে দেখিতে পাইলাম৷ চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলাম—ইহারা এমন অসময়ে ঘুমাইতেছে কেন?

চাকরটি বলিল—অসময় তাহাতে সন্দেহ নাই—কিন্তু তাহাদের এ ঘুম আর ভাঙিবে না৷

—সে কি? ইহারা কে?

—ইহারা মৃত এবং মৃত চিকিৎসক৷

—মরিল কেমন করিয়া?

—চিকিৎসা করিতে গিয়া৷

—চিকিৎসায় তো রুগী মরে৷

—কখনো কখনো চিকিৎসকও মরে—প্রমাণ সম্মুখেই৷

এই সব বাক্য বিনিময়ে আমার চিত্ত উচাটন হইয়া উঠিল৷ আমি বলিলাম—ব্যাপার কি খুলিয়া বলো৷

সে বলিল—বুঝাইবার বিশেষ আবশ্যক আছে কি? হয়তো জীবন দিয়াই আপনাকে বুঝিতে হইবে৷ জমিদারবাবু বড়ই প্রচণ্ডস্বভাবের লোক৷ চিকিৎসায় আরোগ্য করিতে পারিলে তিনি চিকিৎসককে প্রচুর ধনরত্ন দিবেন ইহা যেমন সত্য, তেমনি চিকিৎসক ব্যর্থকাম হইলে তাহাকে মারিয়া ফেলিবেন ইহাও তেমনি সত্য—প্রমাণ তো নিজেই দেখিলেন৷

—আগে আমাকে এ কথা বলা হয় নাই কেন?

—তাহা হইলে কি আর আপনি চেষ্টা করিতে অগ্রসর হইতেন?

—কিন্তু চিকিৎসক মারিয়া ফেলার ইতিহাস তো কখনো শুনি নাই!

—জমিদারবাবুর ধারণা আনাড়ি চিকিৎসক যমের দূত৷ তাহাদের মারিয়া ফেলিলে যমের পক্ষকে দুর্বল করিয়া রুগীর সুবিধা করিয়া দেওয়া হয়৷ কই আসুন—

আমি ততক্ষণে জানালার শিক ভাঙিয়া, পগার ডিঙাইয়া ছুটিয়াছি—আমাকে ধরিবে কে? যদিচ পিছনে আট-দশটি পাইক পেয়াদা দৌড়াইয়াছে দেখিতে পাইলাম৷ এক ছুটে সরাইখানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছি৷ এই পর্যন্ত বলিয়া সে থামিল তারপরে বলিল, আজ আমাকে এই স্যাঁতসেতে মেঝেতেই শুইতে হইবে, তা হোক৷ আমের কাঠের চেয়ে এই ভেজা মেঝে অনেক ভালো৷

এবার সাহিত্যিকের পালা৷ সে বলিল—কি আর বলিব! খুব বাঁচিয়া গিয়াছি—বন্ধু চিকিৎসকের মতো আমিও মৃত্যুর খিড়কি দরজার কাছে গিয়া পড়িয়াছিলাম—নেহাৎ পরমায়ুর জোরেই এ যাত্রা রক্ষা পাইয়াছি৷

সকলে উৎসুক হইয়া শুধাইল—ব্যাপার কি খুলিয়া বলুন৷

সাহিত্যিক বলিয়া চলিল—পূর্বদিকের পথ দিয়া গ্রামে গিয়া তো প্রবেশ করিলাম৷ সে দিকটায় রজকপল্লী৷ রজকপল্লী দেখিলেই আমার রজকিনী রামীকে মনে পড়িয়া যায়, কোন সাহিত্যিকের না যায়? রজক কিশোরীদের লক্ষ্য করিতে করিতে চলিয়াছি—হ্যাঁ—চণ্ডীদাস রসিক ছিল বটে, সজোরে পাথরের উপরে কাপড় আছড়াইবার ফলে দুই বাহু ও সংলগ্ন কোন কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমন সুপুষ্ট হইয়া ওঠে যে, অপরের প্রশস্ত নীল শাড়িও তাহা আবৃত করিবার পক্ষে যথেষ্ট নয়৷ বিশেষ কাপড় আছড়াইবার সময় উক্ত প্রত্যঙ্গদ্বয় শরীরের তালে তালে শূন্যে বৃথা মাথা কুটিয়া মরিতে থাকে, তাহা দেখিয়া কোন পুরুষের মন না ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিবে—সাহিত্যিকদের তো কথাই নাই৷ এমন সময়ে একটি রজক কিশোরী আমাকে দেখিয়া চিৎকার করিয়া উঠিল—ফিরিয়াছে, ফিরিয়াছে!

ফিরিয়াছে? কে ফিরিয়াছে? হ্যাঁ, ফিরিয়াছে বই কি? আমার মধ্যে দিয়া চিরদিনকার চণ্ডীদাস ফিরিয়া আসিয়াছে—রজকিনী রামীর শীতল পায়ে বুঝিলাম জগতে দুটি মাত্র প্রাণী আছে—আমি চণ্ডীদাস আর কিশোরী রজকিনী রামী৷ দেখিতে দেখিতে আমার চারিদিকে একদল কিশোরী জুটিয়া গেল—জগৎ রামীময়, আর তাহাদের ভাব দেখিয়া মনে হইল জগৎ আমিময়৷ এ রকম অবস্থায় কবিতা না লিখিয়া উপায় কি?

একজন বলিল—ফিরিয়াছে৷

(ফিরিয়াছে বই কি! না ফিরিয়া কি উপায় আছে?)

আর একজন বলিল—অনেকদিন পরে৷

(সত্যিই তো! চণ্ডীদাসের পরে আজ কত যুগ গিয়াছে!)

তৃতীয়া বলিল—ঠিক সেই চেহারা, ঠিক সেই হাবভাব৷

(এমন তো হইবেই৷ মানুষ বদলায়, প্রেমিক কবে বদলিয়াছে?)

চতুর্থা বলিল—কেবল যেন একটু রোগা মনে হয়৷ (ওগো শুধু মনে হওয়া নয়...এ যে অনিবার্য বিরহসঞ্জাত-কৃশতা৷)

পঞ্চমী কিছু বলিল না—কেবল আমার গায়ে হাত বুলাইয়া দিল৷

(ওগো বৈষ্ণব কবি, তুমি প্রশ্ন করিয়াছিলে, অঙ্গের পরশে কিবা হয়৷ আজ আমারও ঠিক সেই প্রশ্ন৷)

অপরা বলিল—কিন্তু লেজটা যেন কাটিয়া দিয়াছে?

লেজ? কার লেজ? এবার চণ্ডীদাস-থিওরিতে সন্দেহ জন্মিল৷

এবারে আমি প্রথম কথা বলিলাম—আমি প্রেমিক চণ্ডীদাস৷

তাহারা সমস্বরে বলিল—হাঁগো হাঁ, তাহার ঐ নামই ছিল বটে৷

এই বলিয়া একজন একটা কাপড়ের মোট আনিয়া আমার ঘাড়ে চাপাইয়া দিতে চেষ্টা করিল৷

আমি বলিলাম—আমি তো চাকর নই!

তাহারা বলিল—চাকর হইতে যাইবে কেন? তুমি যে গাধা৷

আমি গাধা!

বলিলাম—সে কি! আমি যে মানুষের মতো কথা বলিতে পারি৷

রসিকা বলিল—অনেক মানুষ গাধার মতো কথা বলে, একটা গাধা না হয় মানুষের মতো কথাই বলিল—আশ্চর্যটা কি?

আমি ব্যস্ত হইয়া বলিলাম—আরে, আরে, আমি যে সাহিত্যিক!

—তবে আর তোমার রাসভত্বে সন্দেহ নাই—কারণ যাহারা মধুর স্বাদ নিজে গ্রহণ না করিয়া কবিতার ব্যাখ্যা করিয়া মরে—তাহারা যদি গাধা না তবে গাধা কে?

তখন অপর এক কিশোরী বলিল—ও দিদি, এ যে বশ মানিতে চায় না—কি করি?

কিশোরীর দিদি যুবতী বলিল—প্রেমের ডুরি খানা আন তো?

প্রেমের ডুরি শুনিলেও দেহে রোমাঞ্চ হয়৷

দেখিতে পাইলাম একজন মোটা একটি কাছি আনিতেছে৷

তবে ওরই নাম প্রেমের ডুরি! ও ডোর ছিঁড়িবার সাধ্য তো আমার হইবেই না—এমন কি পাড়াসুদ্ধ লোকের হইবে না৷ তখনই ছুট৷ কিশোরীরা দৌড়ায় বেশ! প্রায় ধরিয়াছিল আর কি! উঃ, পথ বিপথ লক্ষ্য করি নাই—এই দেখুন হাঁটুর কাছে ছড়িয়া গিয়াছে, কাপড়টা ছিঁড়িয়া গিয়াছে! তবু ভালো যে প্রেমের ডুরিতে বদ্ধ হই নাই!

এই বলিয়া সে থামিল৷ তার পরে বলিল—তবু ভালো যে আজ ভিজা মেজেতে শুইতে পাইব, প্রেমের ডোরে বাঁধা পড়িলে গোয়ালে ঘুমাইতে হইত৷

তাহার কাহিনী শেষ হইলে সকলে মিলিয়া সিনেমা স্টারের অভিজ্ঞতা শুনিবার জন্য উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল৷

চতুর্থ পথিক তাহার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করিতে সুরু করিল৷

—বন্ধুগণ, আমি পশ্চিমদিকের পথ দিয়া গ্রামে প্রবেশ করিয়া দেখি একটি পুকুরের ধারে একটি মেলা বসিয়াছে৷ স্থান কাল পাত্র দেখিয়াই বুঝিতে পারিলাম যে সামাজিক ধাপে আমার জীবনের মূল্য বিচারের ইহাই যথার্থ স্থান৷ আমি তখন পুকুরের জলে নামিয়া ডুবিয়া মরিতে চেষ্টা করিলাম৷ আপনারা ভয় পাইবেন না, সহস্রবার ডুবিয়াও কি করিয়া না মরিতে হয় তাহার কৌশল আমাদের আয়ত্ত৷ ডুবিয়া মরিবার চেষ্টা অভিনয় মাত্র৷ আমি সকলকে ডাকিয়া বলিলাম—আমি ডুবিয়া মরিতেছি, তোমরা আমাকে বাঁচাও! আমার আর্ত আহ্বান শুনিয়া সকলে পুকুরের ধারে আসিয়া দাঁড়াইল, কিন্তু কেহ জলে নামিল না৷

আমি বলিলাম—আমি ডুবিলাম বলিয়া—শীঘ্র বাঁচাও!

তাহারা বলিল—আগে তোমার পরিচয় দাও তবে জলে নামিব৷

আমি বলিলাম—আমি একজন মানুষ৷ বাঁচাইবার পক্ষে ইহাই কি যথেষ্ট নয়?

তাহারা বলিল—আমরা সবাই তো মানুষ৷ কেবল আইনে বাধে বলিয়া পরস্পরকে মারিয়া ফেলিতেছি না—সদয় বিধাতা আইনের নিষেধ লঙ্ঘন করিয়া তোমাকে যখন মারিবার ব্যবস্থাই করিয়াছেন—তখন তোমাকে আমরা বাঁচাইতে যাইব কেন?

আমি তাহাদিগকে পরীক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে বলিলাম—আমি শিক্ষক৷

তাহারা এক বাক্যে বলিল—জীবন্মৃত হইয়া বাঁচিয়া থাকিবার চেয়ে তোমার ডুবিয়া মরাই ভালো৷

আমি বলিলাম—আমি চিকিৎসক৷

তাহারা বলিল—অনেক মারিয়াছ, এবারে মরো৷

—আমি সাহিত্যিক৷

—ডুবাইতে পারো আর ডুবিতে পারো না?

—আমি সাংবাদিক—শুনিয়া তাহারা ঢেলা মারিল৷

—আমি সাধুপুরুষ—শুনিয়া তাহারা হাসিল৷

—আমি বৈজ্ঞানিক—শুনিয়া তাহারা সাড়াশব্দ করিল না৷

—আমি গায়ক—শুনিয়া তাহারা কেহ কেহ চঞ্চল হইয়া উঠিল৷

—আমি খেলোয়াড়—শুনিয়া দু-একজন জলে নামিতে উদ্যত হইল৷

—আমি চলচ্চিত্র অভিনেতা৷

তাহারা বুঝিতে পারিল না৷ তখন বলিলাম—যাহার বাংলা হইতেছে ‘সিনেমা স্টার’৷

ইহা শুনিবামাত্র মেলার সমস্ত জনতা একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়া পড়িল৷ পুকুরের জল স্ফীত হইয়া উঠিয়া মেলার জিনিসপত্তর ভাসাইয়া লইয়া গেল৷

সকলেরই মুখে—হায় হায়! গেল গেল! দেশ ডোবে, জাতি ডোবে, সমাজ ডোবে, রাজ্য সাম্রাজ্য সভ্যতা আদর্শ ডোবে তাহাতে ক্ষতি নাই—কেবল সিনেমা স্টার ডুবিলে সমস্ত গেল! হায়, হায়! গেল, গেল!

সকলে মিলিয়া আমাকে টানিয়া তুলিয়া ফেলিল৷ সকলে অর্থাৎ আবাল বৃদ্ধ নর নারী যুবক যুবতী বালক বালিকা কিশোর এবং কিশোরী৷

আমাকে মাটিতে ফেলিয়া দিয়া আমার দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গের মাপজোক লইতে আরম্ভ করিয়া দিল৷ পা হইতে মাথা পর্যন্ত—নানাস্থানের মাপ৷ তারপরে চুলের রং, ঠোঁটের রং, নখের রং, দাঁতের রং, চোখের রং৷ এ সব টোকা হইয়া গেলে, আমার জীবনেতিহাসের খুঁটিনাটি লইয়া প্রশ্ন সুরু করিল৷ আমাকে কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না৷ আগামী কল্য তাহাদের সম্বর্ধনা গ্রহণ করিব এই প্রতিশ্রুতি দিয়া তবে ছাড়া পাইয়া আসিয়াছি৷

চতুর্থ পথিকের অভিজ্ঞতা শুনিয়া অপর তিনজনে বুঝিতে পারিল আজ রাত্রে তক্তপোশে শুইবার অধিকার কাহার৷

চার বন্ধুতে আহারান্তে শয়ন করিল৷ সিনেমা স্টার তক্তপোশে শুইল—অপর তিনজনে সেই ভেজা মেঝের উপরে৷

তক্তপোশশায়ী সিনেমা স্টারের নিদ্রার তালে তালে যখন নাসিকা গর্জন চলিতেছিল, তখন তিনজনে মশা, মাছি, ছুঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি তাড়াইয়া বিনিদ্র-নিদ্রায় রাত্রি কাটাইতেছিল৷ সারারাত ছুঁচোগুলো চিক চিক করিয়া ঘরময় দৌড়িয়া বেড়াইল—তিনজনের কানে তাহা বিদ্রুপের ফিক ফিক হাসির মতো বোধ হইল৷ ঘরের একপ্রান্তে একটা সাপের খোলস পড়িয়া থাকা সত্বেও তাহারা নির্বিঘ্নে রাত্রি অতিবাহিত করিল৷ কপালে যাহাদের দুঃখ সাপেও তাদের স্পর্শ করে না!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ