Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Widget

অবমুক্ত প্রকল্প | আহসান হাবীব

জাহিদ হোসেন একজন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা। তার কাজটা মজার। কোথাও কোনো প্রাণীকে আটকে রাখা হয়েছে বা যন্ত্রণা দেয়া হচ্ছে এরকম খবর পেলে তিনি তার দলবল নিয়ে হাজির হয়ে যান। তারপর সেই প্রাণীকে আইনগতভাবে উদ্ধার করে অবমুক্ত করে দেন কোনো জঙ্গলে। তার কিছু মাঠকর্মী আছে, তারা খবর নিয়ে আসে বা ফোন করে দেয়—

‘স্যার, খোঁজ পাইছি...!’

মানে কোনো প্রাণীর সন্ধান তারা পেয়েছেন যেটাকে অবমুক্ত করা দরকার।

শেষ যে প্রাণীটাকে জাহিদ হোসেন তার দলবল নিয়ে অবমুক্ত করলেন, সেটা একটা দেশি ভালুক। তার কাছে খবর এল, ময়মনসিংহের ভালুকার কাছে একটা সার্কাস দল নাকি ভালুক খেলা দেখাচ্ছে। তিনি তার দলবল নিয়ে হাজির হলেন। সার্কাসের ম্যানেজারকে ডেকে পাঠালেন—

— এই ভালুক কোথায় পেয়েছেন?

— জি স্যার, মধুপুর জঙ্গল থেকে ধরছি।

— কবে ধরেছেন?

— বছর সাতেক আগে।

— জানেন না এটা অবৈধ কাজ?

— স্যার, জানতাম না।

— এখনতো জানলেন। ভালুকটাকে আমাদের হাতে তুলে দিন। ওটাকে আমরা তার জঙ্গলে ছেড়ে দিব।

— স্যার আপনে আমার মা বাপ, আমার ব্যবসার পেডে লাথি দিয়েন না।

ম্যানেজার এক ফাঁকে তাকে আড়ালে নিয়ে নগদ কিছু দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জাহিদ হোসেন একজন সৎ কর্মকর্তা। তিনি ধমক দিয়ে সত্যি সত্যি ভালুক উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দিলেন। ভালুক নিয়ে যাওয়ার সময় সার্কাসের ম্যানেজার ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগলেন। ভালুকের চোখও ভেজা মনে হল। কিন্তু কি আর করা যাবে, দেশের আইনতো আইন।


বন্যপ্রাণীরা যখন সত্যি সত্যি মুক্ত হয়ে জঙ্গলের গভীরে ছুটে যায় তখন জাহিদ হোসেনের ভীষণ ভালো লাগে। মনটা ভালো হয়ে যায়। তবে বেশ অনেকদিন ধরে অবমুক্ত করার মতো কোনো প্রাণীর খোঁজ আসছে না।

তবে দুদিন বাদেই একটা ফোন এল।

— হ্যালো স্যার, একটা প্রাণীর সন্ধান পাইছি।

— কী প্রাণী?

— সেইটাতো স্যার বুঝতে পারতেছি না।

— মানে?

— মানে স্যার, এইডা কি কিসেমের প্রাণী বুঝতে পারতেছি না। মনে হয়পৃথিবীর কোনো প্রাণী না।

— কী বলছ?

— স্যার ঠিকই বলছি, আপনি স্যার গাড়ি নিয়া চইলা আসেন। আমি ঠিকানাটা এসএমএস করি আপনেরে।

— আচ্ছা কর।

জাহিদ হোসেন বেশ উত্তেজনা বোধ করেন। তার কাজটায় বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার আছে। তিনি গাড়ি নিয়ে ছুটলেন। গাজীপুর হোতা পাড়ার ঠিকানা।

জায়গাটা খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলা হল। একটা একতলা পাকা দালানের সামনে এসে তার গাড়ি থামল। তার লোকজন আগেই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। একটু পর বাড়ির মালিক বেরিয়ে এল।

— কী ব্যাপার?

— আমি জাহিদ হোসেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা।

— আমার কাছে কী কাজে এসেছেন?

— আমরা খবর পেয়েছি আপনি অবৈধভাবে কোনো একটা প্রাণী আটকে রেখেছেন।

— ভুল শুনছেন। কোনো বন্যপ্রাণী আমি আটকাই নাই। তবে...

— তবে?

— তবে একটা এলিয়েনকে আশ্রয় দিয়েছি।

— মানে??

— আসেন আমার সাথে।

লোকটার সঙ্গে তার বাসায় ঢুকলেন। বাসার পিছনে দেয়াল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট বাগানের মতো। বাগানের ঠিক মাঝখানে মানুষের মতো ছোটখাটো একটা কিছু দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু সেটা ঠিক মানুষ নয়। প্রাণীটাকে দেখে জাহিদ হোসেনের মাথাটা ঘুরে গেল। তিনি পড়েই যেতেন। বাড়ির মালিক তাকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। লোকটা ফিসফিস করে বলল—

— স্যার, এই এলিয়েনটা গত সপ্তাহে আমার বাসায় এসেছে। তার ফ্লাইং সসারটা নষ্ট হয়ে গেছে বলে আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টা আমি গোপন রেখেছি। বোঝেনতো জানাজানি হলে... মফস্বল এলাকা...

এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি আর লাল চা খাওয়ার পর মাথাটা ঠিক হল জাহিদ হোসেনের।

— কিন্তু এভাবে একটা এলিয়েনতো আপনি রাখতে পারেন না দেশের আইন...

— এলিয়েন নিয়ে কি কোনো আইন আছে আপনাদের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে?

— তা অবশ্য নেই কিন্তু...

— স্যার, ওর সাথে একটা সেলফি তুলবেন নাকি?

— মানে?

— মানে আজ ও চলে যাবে। আরেকটা ফ্লাইং সসার এসে যে কোনো সময় ওকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। তাই বলছিলাম স্মৃতি হিসেবে যদি একটা ছবি তুলে রাখতেন! জাহিদ হোসেনের গা গুলিয়ে উঠল। প্রাণীটা কুৎসিত, গা দিয়ে তেলতেলে কী যেন বেরুচ্ছে সর্বক্ষণ...

— না না, দরকার নেই। দুর্বল গলায় বলেন জাহিদ হোসেন। ‘কিন্তু অফিসিয়ালি আমি যে প্রাণীটা উদ্ধারে বের হয়েছি এটাতো রেকর্ড হয়ে গেছে। কিছু একটা ধরে না নিয়ে গেলে সবাই ভাববে আমি টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়েছি।’

— তাহলে স্যার একটা কাজ করেন...

— কী?

— আমার ঘরের মেনি বিড়ালটা নিয়ে যান। এটার জ্বালায় আমি মাছ খেতে পারি না, মাছ চুরিতে ওস্তাদ। আপনাদের খাঁচায় ভরে দেই?

— দেন। বিরস মুখে বলেন জাহিদ হোসেন।

এই সময় কেমন একটা সোঁ সোঁ শব্দ শোনা গেল।

— কিসের শব্দ?

— স্যার, ওরা এসে গেছে।

— কারা?

— ঐ যে আপনাকে বললাম না আরেকটা ফ্লাইং সসার আসবে। আসেন দেখবেন।

জাহিদ হোসেন দেখেন সত্যি সত্যি আকাশে গোল একটা চাকতি। হঠাৎ তার নিচ থেকে একটা নীল আলো নেমে এল বাগানে দাঁড়ানো ঠিক এলিয়েনটার ওপরে। তারপরই আলোটা নিভে গেল আর এলিয়েনটা নাই হয়ে গেল।

মেনি বিড়াল খাঁচায় নিয়ে ফিরে এলেন জাহিদ হোসেন। একে জঙ্গলে অবমুক্ত করে আর কী হবে? এতো মনে হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়িতে বড় হয়েছে। অফিসে রেকর্ডভুক্ত করে বিড়ালটাকে রাস্তায় ছেড়ে দিলেন।

পরদিন অফিসে একটা নতুন সারকুলার এল। বন্য সংরক্ষণ আইনে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। এবং জাহিদের পদেরও সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। তার পদ এখন ‘বন্যপ্রাণী ও বহির্বিশ্ব এলিয়েন সংরক্ষণ কর্মকর্তা।’

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ